সাম্প্রতিক পোস্ট

বিভেদ ভুলে ঐক্য তৈরির প্রত্যাশা

মানিকগঞ্জ থেকে কমল চন্দ্র দত্ত
“জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত হোক” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম দাশড়া গ্রামের রবিদাস পাড়ায় আন্তর্জাতিক জাতিগত বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস উপলক্ষে নারী ও কিশোরীদের অংশগ্রহণে গ্রামীণ খেলাধুলা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি দশরথ রবিদাস, রবিদাস সম্প্রদায়ের মাতব্বর বিরেন রবিদাস, হরিজন সম্প্রদায়ের মনি হরিজন, রবিদাস উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি সীমা রাণী দাস, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, প্রোগ্রাম অফিসার কমল চন্দ্র দত্ত ও মাঠ সহায়ক ঋতু রবিদাস। অনুষ্ঠানে নারী, যুব ও কিশোরকিশোরীসহ ৬৫ জন অংশগ্রহণ করেন ।


শুরুতেই নারীদের অংশগ্রহণে বালিশ নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ৩০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। কৌশল, চতুরতা এবং আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খেলা শেষ হয়। খেলায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে- শিল্পি রবিদাস,, উমা রবিদাস ও লক্ষ্মী রবিদাস। এরপর ১২ জন কিশোরীর অংশগ্রহণে ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সঠিক নিশানা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে ঝুড়িতে বল ফেলে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে- বৃষ্টি রবিদাস, প্রিয়া রবিদাস ও পুষ্প রবিদাস।


খেলা শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি দশরথ রবিদাস। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার কমল চন্দ্র দত্ত। তিনি আন্তর্জাতিক জাতিগত বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবসের প্রোক্ষাপট ও এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।


আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে দশরথ রবিদাস সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “বারসিক আমাদের প্রান্তিকতা দূর করা জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবাপ্রাপ্তি, কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের রবিদাস, মনিদাস, হরিজন, লৌহকার, রাজবংশী সম্প্রদায়ের অনেক ছেলেমেয়ে কারিগরি, নার্সিং ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। কেউ কেউ চাকুরি করছে। পৌরসভা, জেলা পরিষদ, ইউএনও অফিস, সমাজ সেবা অফিস, ডিসি অফিসসহ বিভিন্ন অফিসে যেতে দ্বিধা কাজ করে না। কিছু কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই জাতিগত বৈষম্য ভুলে গিয়ে একসাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে। বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশ।’


মনি হরিজন বলেন, ‘আগে হরিজন ও রবিদাস সম্প্রদায়ের মধ্যে যাতায়াত বা মেলামেশা ছিল না। বারসিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজনের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করছে। এছাড়া খেলাধূলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের জাতিগত বর্ণবৈষম্য কিছুটা কমেছে।”


রবিদাস সম্প্রদায়ের মাতব্বর বিরেন রবিদাস বলেন, “দীর্ঘদিনের বর্ণবৈষম্য দূর করা সহজ নয়। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাতায়াত ও মেলামেশা বাড়ছে। আশা করি এই বৈষম্য ধীরে ধীরে ঘুচে যাবে। এই সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়ার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ।” বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‘জাতি, বর্ণ, ধর্মগত বৈষম্য শত শত বছর ধরে চলে আসছে। নানাভাবে আন্দোলন সংগ্রাম হলেও ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার সার্পভিলে বর্ণবাদী আইন পাশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল। বর্বর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এই দিনটির মাধ্যমেই ১৯৬৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস পালিত হয়ে আসছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন বর্ণবাদী কৃষ্ণাঙ্গ নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। যিনি স্বপ্ন দেখতেন সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে।’

happy wheels 2

Comments