আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে

মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়

মনিন্দ্র মনিদাস বয়স (৭০) বছর। তিনি একজন কুটির শিল্পী, বাঁশ বেতের কারিগর। বংশপরম্পরায় এ কাজটি করে আসছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে বাঁশ দিয়ে চালুন, ঝাঁকা, ট্যাাপা, ধারা,চাটাই, কুলাসহ নানান কৃষিজ ব্যবহারিক উপকরণ তৈরি করেন। দুই ছেলে ও তার স্ত্রী সন্তানসহ তার সংসার। তিনি গ্রামের মণিঋষি সম্প্রদায়ের পঞ্চায়েত প্রধান। ছেলেরা শ্রমজীবী, নিজের বসতবাড়ি ছাড়া কৃষি জমি নেই। পাশাপাশি দুইটি গরুর জন্য ঘাস কাটেন এবং তাদের যতœ করেন। নিজে তেমন লেখাপড়া জানেন না! আর্থিক অসংগতির কারণে সন্তানদের বেশি পড়াতে পারেননি। তাছাড়া এলাকার মানুষের ভিতর অসচেতনতার কারণে লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক কম। তাই নিজ সন্তানসহ অন্যান্যরা তেমন পড়াশোনা করেনি। তবে নিজের সম্প্রদায়কে কীভাবে শিক্ষিত ও সচেতন করা যায় সেই বিষয়ে তিনি ভাবেন।


তিনি জানান, বারসিক নামক একটি সংস্থা তাদের এলাকায় একটি ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার ও বাল্যবিয়েসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করে। সংস্থাটি শিশুদের শিক্ষার আলো দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা কেন্দ্র চালু করে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, এই কাজের মাধ্যমে বারসিক কর্মীরা নিয়মিততাদের গ্রামে আসে এবং শিক্ষাসহ নারীদের অধিকার, কৃষি, বাল্যবিয়ের বিষয়ে সচেতন করার কাজ করে। বারসিক আমাদের নানান পরামর্শ দিয়ে, কোন কোন সময় খাতা, কলম দিয়ে বিভিন্ন দিবস পালন করে আমাদের শিশুদের উৎসাহিত করে আসছে। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে কোন একসময় প্রাক প্রাথমিক স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়। আমরা চেষ্টা করি আমাদের সমস্যাগুলো কর্তৃপক্ষের বরাবরে জানানোর জন্য। একসময় নীলিমা দিদিমনি নিয়মিত আমাদের এলাকায় আসতেন। তিনি নিজেও আমাদের মতো প্রান্তিক রবিদাস সম্প্রদায়ের মানুষ। আমাদের কথা ও বেদনা বুঝতে পারতেন। তাই তিনিও এ বিষয়ে আমাদের সাথে কথার সুর তুলে বিভিন্ন সভায় তুলে ধরতেন।’
তিনি জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নানান যোগাযোগ ধর্মীয় মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু-ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তায় প্রাক-প্রাথমিক স্কুল পুনরায় মহেন্দ্র মণিদাসের বাড়ির বারান্দায় চালু হয়। মনিন্দ্র মণিদাস বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সভার মাধ্যমে জানতে পারা যায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর অধীন মন্দিরের জন্য অনুদান দেয় এবং জেলা পরিষদ শ^শ্মানঘাটের উন্নয়নে বিশেষ করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনুদান দেয়। এর প্রেক্ষিতে দুটি আবেদন করি নীলিমা দিদির সহায়তায়। অনেকবার গিয়েছি জেলা পরিষদ, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট কার্যালয়ে ও নানান সভায়। অনেকের সহায়তায় ও এলাকাবাসীর একান্ত চেষ্টায় নানান বাধাকে অতিক্রম করে অবশেষে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দূর্গা মন্দির নির্মাণ হয়েছে। শ্বশ্মান ঘাটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা জেলা পরিষদ পেয়েছি। দুইটিই ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন এ ধরনের নির্মাণের মাধ্যমে তা পূরণ হয়েছে। যদি প্রতি নিয়মিত যোগাযোগ না বা খোজ খবর না নিতাম তাহলে আমাদের পক্ষে এটা পাওয়া সম্ভব ছিল না। ধন্যবাদ জানাই নীলিমা দিদিমনিকে ও বারসিক এবং অন্যানদেরকে যারা আমাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। আমরা বারসিক’র যে কোন উদ্যোগকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। বারসিক’র আসার পর থেকে আমাদের এলাকায় বাল্য বিয়ের হার কমেছে এবং শিশুদের পড়াশোনার হার বেড়েছে। পাশাপাশি এলাকার মানুষ অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় আমাদের মধ্যে একতা বেড়েছে। সরকারি বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান আমরা কমবেশি পাই।’

happy wheels 2

Comments