নৌকা কারিগরদের পেশা হারিয়ে যাওয়ার পথে
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
বর্ষা আসতে শুরু করেছে। বর্ষার আগমনে বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের জল প্রবেশ শুরু হয়েছে। গ্রামের চারপাশে বর্ষার থই থই জলের আগাম পূর্বাভাসের সাথে সাথে গ্রামগঞ্জের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বর্ষার কোথায়ও যেতে নৌকাই একমাত্র ভরসা। ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের নি¤œ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বর্ষায় যাতায়াতের ভরসা একমাত্র এই নৌকা। নৌকায় যাত্রী পারাপারের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। তাই বর্ষা আসলে তাঁদের আয় রোজগারও বাড়ে।
বর্ষার নৌকায় প্রধান চলাচলের যানবাহন সম্পর্কে নারায়ণ সূত্রধর বলেন, ‘আমাদের জাত পেশাকে আমি টিকিয়ে রেখেছি আমার ছোট ভাই ধীরেন সূত্রধরকে (৫৯) নিয়ে। নৌকার কারিগর হিসেবে আমরাই কাজ করি, বর্ষা আসলে পুরাতন নৌকা খুঁজ দেয়া, চাপা দেয়া, গোলই লাগানো, নৌকার কাছ মেরামত, নৌকার তলা মেরামত করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। বয়স হওয়ার কারণে এখন আর বেশি কাজ করতে পারি না। আমার ছোট ভাইকে দিয়েই কাজ করাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে নতুন নৌকা তৈরি কম হয়। বেশিরভাগ মানুষ বর্ষাকালের জন্য হাট-বাজার থেকে ডেংগী রেডিমেট কিনে আনে। নতুন নৌকা তৈরি করতে ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আমরা ঘাসি নৌকা, ভেদি নৌকা, লম্বা গোলই নৌকা, জেলেদের নৌকা, ডেংগী তৈরি করি। এমন কাজ আমি আমার বাব-দাদার নিকট হতে শিখেছি।’
বর্তমানে ঘিওর উপজেলার গ্রামগুলো ও হাটবাজারে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কারিগররা। চলছে নৌকা তৈরি ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছেন কেউ আবার নৌকায় আলকাতরা দিচ্ছে। চারদিকে হাতুড়ি-কাঠের খুট খুট শব্দ শোনা যায়অ বর্ষা শেষে কারিগররা ঘরের ও আসবাপত্র তৈরিতে নিজেদের মনোনিবেশ করেন। বর্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেলেদের নৌকা দিয়ে ব্যার জাল ও ভেসালে রাতদিন মাছ শিকার করে জীবিকা নির্ভর করে থাকেন অনেক জেলেও। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা নৌকার মাধ্যমে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে এমনকি এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যান। এছাড়া নৌকা ব্যবহার করতে হয় হাট-বাজার, স্কুল-কলেজে যাতায়াতেও।
প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জে মানুষ চলাচলে স্থল পথের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর আগের মত নৌকার ব্যবহার নেই। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের কারণে দিন দিন নৌকার ব্যবহার কমে যাওয়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত কারিগরদের টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন গাংডুবী গ্রামের নারায়ণ সূত্রধর (৭৮)।