সাম্প্রতিক পোস্ট

অসময়ে বর্ষা ও খরায় কৃষক নিঃস্ব

অসময়ে বর্ষা ও খরায় কৃষক নিঃস্ব

সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর পদ্মা বেষ্টিত নি¤œ প্লাবন ভুমি এলাকা। এখানকার মাটি বেলে দু’আশ মাটিতে চর ও নি¤œ প্লবন ভুমিতে ধনিয়া, রাঁধুনী, কালিজিরা, পিয়াজ, রসুন, মরিচ, বাঙ্গি, শরিষা, তিল, কাউন, গুজিতিল, লাউ, লালশাক, পাটশাক, কচু, ঢেরস, বেগুন, মিষ্টি আলু, গোল আলু, খেসারী, মুগ ডাল ও আমন মৌসুমে হিজল দিঘা ধান চাষ করেন। এবছর দেখা যায় বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে রুদের খড় তাপে মাঠের ফসল পুড়ে যায়। কৃষক সেচ দিয়েও মাঠের ফসল রক্ষা করতে পারেনি। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় মানুষসহ প্রাণি সম্পদ ও পশু পাখি টিকে থাকা কষ্ট হয়েছে।


মানিকগঞ্জ পদ্মা, ধলেশ^রী, ইছামতি, কালিগঙ্গা বেষ্টিত নিচু এলাকা হওয়ায় উজানে বৃষ্টির পানিতে আষাঢ়ে প্রথমে বর্ষার দেখা মেলে। কিন্তু এবছর আষাঢ়ের শেষেও বর্ষার দেখা মেলেনি। মানিকগঞ্জ এলাকায় আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে অল্প পরিমাণে বৃষ্টির দেখা পেলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে দেশের কোন কোন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে মাঠে পলি মাটিসহ পানি মাঠে প্রবাহিত হয়নি। ফলে বৈশাখ মাসে মাঠে বপন করা হিজল দিঘা, মোল্লা দিঘা, ভাউয়্যালা,বার্গা দিঘা, দিঘা ধান ছোটই রয়ে গেছে। এসকল ধানের বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষার পানি আসবে, পানির সাথে সাথে ধান বড় হয়। তাছাড়াও মাঠে পলি না পড়ায় ফসল বৈচিত্র্য আবাদে ব্যাঘাত ঘটে। এই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফসলের মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে লক্ষি দিঘা ধান, গুজিতিল, জৈন, কাউন, তিশির আবাদ।


হরিরামপুরের বাহিরচরের কৃষক সুচরন সরকার বলেন, ‘কৃষক চাষাবাদ কিভাবে করবেন প্রকৃতির হাবভাব বুঝি না। কখন বৃষ্টি হবে আর কখন খরা হবে। আগে সুনির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হতো চাষাবাদ করতে ভালো লাগত। এখন খরা ও অতি বৃষ্টিতে দুভাবেই ফসল নষ্ট হচ্ছে। এবছর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দু মাসের খরায় কৃষকে নিঃস্ব করেছে। আমি ৩০০ শতক জমিতে ভুট্টা, তিল, রাঁধুনী, কালিজিরা, ধনিয়া কচু চাষ করেছি। রোদে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেচ দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারেনি। রোদের এত তাপ ছিল। এ অবস্থায় আমরা আমাদের চাষাবাদের বীজ হারিয়েছি।’
মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের কৃষক শহীদ বিশ^াস (৫৭) বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হয়। বর্ষা হয়ে মাঠে ঘাটে পানি প্রবাহিত হয়। পলি পড়ে মাঠের ফসল ভালো হয়। এবছর আষাঢ় মাস শেষ বর্ষার দেখা মেলেনি। হরিরামপুরে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এই সময়ে মাঠে ঘাট পানিতে তলিয়ে থাকে। আমরা জমিতে দিঘা জাতের ধান চাষ করি।

পানির সাথে তাল মিলিয়ে বড় হয়। আমরা খড় ও ধান পাই। আবার ঝিটকা হাজারি গুর তৈরিতে দিঘা ধানের খড় প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও গবাদি পশুর খাদ্যের সমস্যা থাকে না। বর্ষার সময় প্রাণীর সম্পদের খাদ্য হিসাবে অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে জল দুর্বা, দুর্বাঘাস, কাটা হেনসি, কাশবন, ছোন, কাইশ্যা, নলখাগড়া ঘাস, গোইচা, হেনসি, বাদলা, হামা, ছোট কলমী ও কস্তরী এ সকল কাচা ঘাস গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।’
হরিরামপুর আন্ধারমানিকের কৃষক রেনুবালা বিশ^াস (৫০) বলেন, ‘আমরা মাঠে ফসল ফলাই। কৃষক হিসাবে আমাদের অভিজ্ঞতার কমতি নেই। তবে এবছর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে খরায় ফসল পুড়ে। তবে এবছর বর্ষা দেরিতে আসায়, মাঠে ফসল চাষ করতে দেরী হবে, উৎপাদন কম হবে। অসময়ে অতিবৃষ্টিতে ফসলে লালশাক, মুলা, ধনিয়া, ডাটা নষ্ট হয়। বর্ষা আসে দেরিতে, ঠিক সময়ে ফসল বপন করতে পারি না। আমি খেসারী, দেশি টমেটু, লাল মুলা, আউশা ডাটা, তিল, তিশি, শরিষা, মটরসহ ধান বীজ সংরক্ষণ করে চাষ করি। আমি বারসিক এর নিকট থেকে কাউন, হলুদ, গুজিতিল বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছি। কাউন আবাদে সার বিষ লাগে না, ফলে উৎপাদন খরচ কম।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে কৃষকের ফসল নষ্ট হয় আবার খরায় ফসল পুড়ে যায়। আবার বর্ষা দেরিতে আসায়, চাষাবাদ করতে দেরি হয়। উৎপাদন কম হয়। এভাবে ফসল নষ্ট হওয়া ও ফসল উৎপাদন কমে আসায়, কৃষকের নিকট থেকে ফসলের বৈচিত্র্য হারা হচ্ছে। মাঠ থেকে প্রান্তিক কৃষক ফসল ঘরে তুলতে না পারায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

happy wheels 2

Comments