কলমাকান্দায় বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত

কলমাকান্দা থেকে গুঞ্জন রেমা

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী কালাপানি গ্রামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের উদ্যোগে বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। “ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য জলাভূমি রক্ষা করি” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

র‌্যালিতে জলাভূমি সুরক্ষায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরণের ফেস্টুন প্রদর্শিত হয়, যেমন: “জলাভূমি রক্ষা কর, মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত কর”, “জলাভূমি আমাদের জীবনসাথী, এর সুরক্ষায় গড়ি বন্ধন শক্তি”, “জলাভূমি দিলে জীবন দান, মানুষ পাবে টেকসই প্রাণ”, “মানুষ ও জলাভূমি হাত ধরাধরি, প্রকৃতি বাঁচলে ভবিষ্যৎ গড়ি”, “জলাভূমি শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষেরও অস্তিত্বময়”, “জলাভূমি থাকলে মানুষ থাকবে, পরিবেশের ভারসাম্য টিকবে”, “জলাভূমির যত্ন নাও, মানুষ ও প্রকৃতির বন্ধন বাড়াও!” প্রভৃতি।

প্রতি বছর ২রা ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় জলাভূমির অপরিসীম গুরুত্ব এবং এর সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা। ১৯৭১ সালের এই দিনে ইরানের রামসার শহরে জলাভূমি সংরক্ষণ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা “রামসার কনভেনশন” নামে পরিচিত। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী জলাভূমি দিবস পালন করা হয়।

জলাভূমি হলো প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু জলাশয় বা পুকুর নয়, বরং এতে নদী, হ্রদ, ম্যানগ্রোভ বন, জলমহাল, খাল, বিল, চর, মোহনা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। জলাভূমি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, জলজ প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি আমাদের খাবার, পানীয় জল, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আধুনিক নগরায়ন, শিল্পায়ন, দূষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অনিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের কারণে জলাভূমি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।

তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে জলাভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পরিবেশবিদ, তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে জলাভূমি রক্ষা করতে। আমাদের পরিবেশ বাঁচাতে জলাভূমি রক্ষা করা জরুরি।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জলাভূমি শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্যই নয়, বরং মানুষের টেকসই জীবনযাত্রার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলাভূমি সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ দরকার। ফিদেল রিছিল বলেন, “এক সময় আমরা এই ছড়া থেকে অনেক মাছ, কাকড়া, চিংড়ী ও শামুক সংগ্রহ করতাম, যা এখন আর পাওয়া যায় না।” পারুল দারিং বলেন, “এই ছড়া থেকে আমরা খাবার পানি সংগ্রহ করি, যদি এটি না থাকতো তবে আমাদের গ্রামটি মরুভূমি হয়ে যেত এবং পানির সংকট আরও তীব্র হতো।”

বারসিকের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে কলমাকান্দার কালাপানি গ্রামে স্থানীয় জনগণের মধ্যে জলাভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে জলাভূমি সংরক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

happy wheels 2

Comments