বিশ্ব জলাভূমি দিবসে “বিল গোবিন্দ চাতল” রক্ষায় কৃষকবন্ধন
নেত্রকোনা থেকে মির্জা হৃদয় সাগর
জলাভূমি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এটি স্থানীয় ও আঞ্চলিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টিপাত সংরক্ষণ, মিঠা পানির আধার, ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরাট, কার্বন সংরক্ষণ, জলবায়ু অভিঘাত প্রশমন ও অভিযোজন, জীবিকা সৃষ্টি এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য জলাভূমি রক্ষা করি”। এ উপলক্ষে নেত্রকোনা শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি, সবুজ সংহতি, সেভ দ্যা এনিমেলস অব সুসং-এর আয়োজনে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় নেত্রকোনার অন্যতম বড় জলাভূমি “বিল গোবিন্দ চাতল” সংরক্ষণের দাবিতে কৃষক, কৃষানি, শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশগ্রহণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ কৃষক মো. আব্দুল হামিদ। আলোচনা করেন অধ্যাপক নাজমুল কবীর সরকার, সাংবাদিক মির্জা হৃদয় সাগর, সেভ দ্যা এনিমেলস অব সুসং-এর সভাপতি আরেফিন আহমেদ রাসেল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার তানভীর হায়াৎ খান, বৃক্ষপ্রেমিক আব্দুল হামিদ কবিরাজ, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষক ও যুব সমাজ।
নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা ইউনিয়নের ছোট কাইলাটি, সনুরা, কাইলাটি, বড়কাইলাটি, দড়িজাগি, বিশিউড়া, শ্রীধরপুর, বামনমুহা, রাজেন্দ্রপুর, হোসেনপুরসহ ১৩টি গ্রামের মানুষ বিলের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকদের মতে, একসময় এই বিল ছিল মাছ, জলজ খাবার ও কৃষি সেচের প্রধান উৎস। কিন্তু বর্তমানে বিলটি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সেচ, বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের ফলে জলাভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। একসময় এই বিলে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত, যা এখন হ্রাস পেয়েছে। আগে এখানে নানা প্রজাতির পাখি, মেছো বিড়াল, গুইসাপ, ব্যাঙ, পানকৌড়িসহ বহু প্রাণী বাস করত, যেগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত। কৃষকরা দাবি করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিল গোবিন্দ চাতল পুনঃখনন এবং দখলমুক্ত করা প্রয়োজন।
আলোচনায় নেত্রকোনা শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি জনাব নাজমুল কবীর বলেন, “জলাভূমি প্রকৃতির কিডনির মতো কাজ করে। আমরা জলাভূমি ধ্বংস করে উন্নয়ন চাই না। আমাদের উচিত নদী, হাওর, খাল, বিল, পুকুর ও ডোবা সংরক্ষণের জন্য কাজ করা। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের কোনো জবাব থাকবে না।”
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নেত্রকোনা অঞ্চল নদী-নালা, বিল-হাওর, পুকুর ও জলাভূমির মাধ্যমে পরিবেষ্টিত। জলাভূমি রক্ষা করা মানে দেশের প্রাণ রক্ষা করা। পরিবেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষার জন্য জলাভূমি সংরক্ষণ একটি মানবিক দায়িত্ব।