পারিবারিক পুষ্টিতে একজন নারীর ভূমিকা
মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রাখে গ্রামীণ নারী। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে মাংশ, দুধ, ও ডিমের চাহিদাসহ বসতবাড়ি বাগানের মাধ্যমে দৈনন্দিন সবজির চাহিদা মেটাতে নারীর জুড়ি মেলে না। বর্তমান প্রজন্মের নারীদের এ চর্চার সাথে যথাযথ সম্পৃক্ততা না থাকলেও নারীর চিরায়ত স্বভাবসূলভ ভূমিকায় সক্রিয় আছেন অধিকাংশ প্রবীণ নারী। পারিবারিক পুষ্টির শতভাগ চাহিদা পূরণে ভূমিক রাখছেন এমন নারী হলেন লাইলী বেগম।
সিংগাইর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামের ৬০ বছর বয়সী প্রবীণ নারী লাইলী বেগম। ২০ বছর আগে স্বামী শাহাবুদ্দিন মারা যাওয়ার পর পারিবারিক কৃষিকে অবলম্বন করে ২ ছেলে ১ মেয়েকে মানুষ করেছেন কৃষাণী লাইলী। বর্তমানে বড় ছেলের সংসারে থাকেন, তথাপি অভ্যাসগত কারণে এখনও পারিবারিক কৃষিকে আকড়ে ধরে আছেন তিনি। বাড়িতে মুরগি, ছাগল ও গরুর খামার। বাড়ির আঙ্গিনা এবং পালানি জমিতে পুইশাক, লালশাক, কলমী শাক, ডাটা, লাউ, কৃমড়া, বেগুন, শিম, মুলা, টমেটো, ফুলকপি, পাতা কপি, গোল আলু, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনিয়া, কালোজিরা, কাঁচা কলা, সরিষাসহ বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় সবজি ও মশলা ফসল চাষ। আম, কাঁঠাল, লিচু, ছবেদা, লেবু, কদবেল, কুল, নারকেল সুপারি, বিলাতিগাবসহ নানা বৈচিত্র্যময় ফল গাছে ভরপুর করে রেখেছেন তার বাড়িটিকে। তিনি জানান, এ সব কাজ তিনি এক হাতে পরিচালনা করেন। পরিবারের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে কোন কিছু ক্রয় করতে হয়না তার।
এ প্রসঙ্গে লাইলী বেগম বলেন, “আমি বাজার থেকে কোন ধরনের সবজি ফলমুল, দুধ ডিম কিনি না, বরং অতিরিক্ত ডিম, দুধ, সবজি বাজারে বিক্রি করি। এটা থেকে আমার বাড়তি আয় হয়। যা আমার নিজের পছন্দমত খরচ করি।” তিনি আরো বলেন, ‘নিজে উৎপাদন করি বলেই পরিবারের মুখে নিরাপদ খাবার তুলে দিতে পারি। প্রতিবেশীকে শাকসবজি ও বীজ দিয়ে সহায়তা করতে পারি।”
বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ২০১৪ সাল থেকে কৃষাণী লাইলী বেগমের সাথে সম্পৃক্ত হয়। বিভিন্ন তথ্য, পরামর্শ, ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তার এ কাজকে আরো বেগবান ও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করে। বর্তমানে নয়াবাড়ি গ্রামের লাইলী বেগম পারিবারিক পুষ্টি নিরাপত্তার একটি উদাহরণ।
আমরা স্বাভাবিকভাবে পরিবারে নারী অবদানকে স্বীকার করতে চাই না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন নারী তার পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রাখে, তবে সেটা বিশ্লেষণ ও স্বীকৃতি দেওয়া এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ চর্চার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া আমাদের সকলের দায় ও দায়িত্ব।