মূল্যবান ঔষধি বৃক্ষ বিশল্যাকরণী
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ে পাঁচ শত প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য রয়েছে। এসকল উদ্ভিদের রয়েছে নানা গুণ। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। একই সাথে কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, ছিলে যাওয়া ও ব্যাথা পাওয়ার মতো নানান দূর্ঘটনা ও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এসকল কাজে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়াভাবে ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন গ্রামের সাধারণ মানুষেরা। প্রাথমিক চিকিৎসা কাজে যেসকল ভেষজ উদ্ভিদবৈচিত্র্য ব্যবহৃত হয় এর মধ্যে একটি অতি মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি বৃক্ষ বিশল্যাকরণী।
বিশল্যাকরণী এক ধরনের লতা জাতীয় বৃক্ষ। পাতাগুলো গাড় সবুজ বর্ণের এবং মাঝখান বরাবর শিরাটি লালচে রংয়ের। এটার ফুল, ফল এবং বীজ থেকে চারা গজায়। তবে প্রতিটি পাতার গোড়ায় কাটা থাকে। বিশল্যাকরণী একটি অতি মূল্যবান এবং অতীব প্রয়োজনীয় ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। বিশল্যাকরণীর পাতা বা শিকড় বেঁটে জ্বাব দিলে কাটা, ব্যাথা বা ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। পুরানো ব্যথার উপশম পেতে অনেকেই এটাকে ব্যবহার করেন। জটিল ও পুরাতন চুলকানি, এ্যাকজিমা এবং কাটা ফোটায় বিশল্যকরণীর পাতা বেটে লাগালে খুব কার্যকরী উপশম হয় বলেই জানালেন স্থানীয় ব্যবহারকারীবৃন্দ। ”
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী শতমূল, অনন্তমূল, অপরাজিতা, ঈষাণমূল, লালকেউটে, কালকেউটে, শিউলি, সোনাঝুরি, কৃষ্ণ তুলসী, রাধা তুলসী, মাধবীলতা, যাঁতিফুল, শিষ আকন্দ, ঘৃতকুমারী, শ্বেত আকন্দ, বাউশূল, ভুইকুমড়া, কানফুল, ঝাউগাছ, চিরবসন্ত, পাথরকুচি, দূর্বাঘাস, মেহেদী, ধুতরা, গাদাফুল সহ শতাধিক প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে নিজ আঙিনায় গড়ে তুলেছেন ছোট একটি ঔষধি কানন। এই ঔষধি কাননে নতুন বৈচিত্র্য হিসেবে যুক্ত করলেন বিশল্যাকরণী গাছ।
“বিশল্যাকরণী সম্পর্কে হিন্দুদের রামায়ন নামক ধর্মীয় মহাকাব্যে রাম ও রাবনের যুদ্ধের কাহিনী দ্বারা উল্লেখিত। ঘটনার এক পর্যায়ে রাবন শক্তিশেল নিক্ষেপ করল রামের ভাই লক্ষ্মণের বুকে, লক্ষ্মণ যখন মৃত্যু পথযাত্রী, তখন কবিরাজ বলল, সেই রাতের মধ্যেই বিশল্যাকরণী লতার রস খাওয়াতে হবে তাহলেই লক্ষ্মণ বাঁচবে। কিন্তু বিশল্যাকরণী আছে হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে আর লক্ষ্মণ শুয়ে আছে লংকা দ্বীপে। তখন হনুমান বলল সে যাবে গন্ধমাদন পর্বতে। সে মারল এক লাফ, এক লাফে গিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরের গন্ধমাদন পর্বতে গিয়ে পড়ল। কিন্তু সে বিশল্যাকরণী লতা চিনতে পারলেন না, তাই অগত্যা গোটা পর্বত ডান হাতে নিয়ে আবার লাফ দিল। কিন্তু পথি মধ্যে আসতেই দেখল সূর্য্য উদয় হয় হয়। সূর্য উদয় হলেই আর লক্ষ্মণকে বাঁচান যাবে না। তখন উপায় না দেখে হনুমান সূর্য্যকে ধরে তার বা বগলে চেপে রাখল। অতঃপর সেই বিশল্যাকরণী খেয়ে লক্ষ্মণ সুস্থ হয়ে গেল, তারপর হনুমান সূর্য্যকে ছেড়ে দিলে সেটা গিয়ে মধ্য গগনে গিয়ে থামল।”
বিশল্যাকরণী সম্পর্কে অল্পনা রানী বলেন, “আমার কৃষি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্য রয়েছে, আমি সাতক্ষীরার একটি নার্সারি থেকে গাছটি সংগ্রহ করেছি। এটা অনেক দামী গাছ, যে কারণে আমি চারা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সম্প্রসারণ করে চলেছি।”
প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় ভেষজ চিকিৎসায় অতি মূল্যবান বিশল্যাকরণী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে টিকে থাকবে এই ঔষধি উদ্ভিবৈচিত্র্য এবং সুরক্ষিত থাকবে প্রাণবৈচিত্র্য।