নিরাপদ খাদ্য বনাম অনিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা- প্রেক্ষিত জনস্বাস্থ্য

ঢাকা থেকে সৈয়দ আলী বিশ্বাস

খাদ্য প্রতিটি প্রাণের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়, খাদ্য ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। যেসকল জৈব উপাদান প্রাণের দেহ গঠন, দেহের ক্ষয় পূরণ ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে সেগুলোই খাদ্য। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণীর সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকা, পূর্ণবিকাশ ও শারীরিক কর্মক্ষমতার জন্য যেসব জৈব উপাদান গ্রহণ করা প্রয়োজন তাই খাদ্য। এই প্রেক্ষিতে প্রতিটি প্রাণের জন্য খাদ্যের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তাকে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি। এক. দেহ গঠন, দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদন, দুই. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শরীরকে সুষ্ঠ ও সবল রাখা। খাদ্যের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তার এই দুটি দিক থেকেই উঠে আসে নিরাপদ খাদ্যের প্রসঙ্গটি। একমাত্র নিরাপদ খাদ্যই পারে খাদ্যের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে। সে কারণে খাদ্যের সাথে স্বাস্থ্য গঠণের রয়েছে এক গভীর সম্পর্ক যা একে অপরের পরিপূরক। নিরাপদ খাদ্যের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত খাদ্য নিরাপত্তা বলতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিবেচনায় সকলের জন্য সুষম ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যের নিশ্চয়তাকে বুঝে থাকি। যে খাদ্য তাকে পরিতৃপ্ত করবে, দৈহিক ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকতে অবদান রাখবে। অর্থাৎ একটি সক্রিয় ও সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিয়তাই খাদ্য নিরাপত্তা। সময়ের সাথে সাথে খাদ্য নিরাপত্তার ধারণাটিও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা বলতে শুধুমাত্র খাদ্যের পর্যপ্ততা ও সহজলভ্যতা বুঝায় না, এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে খাদ্যের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, খাদ্যের মান, খাদ্য গ্রহণের মাত্রা, পছন্দ-অপছন্দ সর্বোপরি সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি।

খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য এই চারটি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা এবং সকল প্রাণসত্ত্বার শারীরিক বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু অর্জিত হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই তাদের একমাত্র কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে চারটি জাতীয় নীতিমালা- যথা জাতীয় কৃষি নীতিমালা ২০১৮, জাতীয় মৎস্য নীতিমালা ১৯৯৮, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা ২০১১ এবং জাতীয় খাদ্য নীতিমালা ২০০৬। সেই সাথে রয়েছে নানা আইন ও বিধিমালা। উল্লেখ্য যে জাতীয় খাদ্য নীতিমালা ২০০৬ কে সংশোধন ও হালনাগাদ করার জন্য জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এই নীতিমালাগুলোর মাধ্যমে দেশের সকল প্রাণসত্ত্বার খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা বুঝতে পারি। কৃষি নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপদ, লাভজনক কৃষি ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করা। অর্থাৎ কৃষিকে লাভজনক করে খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে সকলের পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাহলে উৎপাদকসহ সকলেরই লাভবান হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন, প্রতি বছর উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্যের জন্য কৃষকের যে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয় তা থেকে স্পষ্টই বুঝা যায় বর্তমান কৃষি কৃষকের জন্য নয়। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে আমাদের যুব সমাজের উপর। বর্তমানের যুব সমাজ বাধ্য না হলে কোন ভাবেই কৃষিকে তাদের উপার্জনের পথ হিসেবে গ্রহণ করছে না। তাই আজ একটি প্রশ্ন জাতি মনে জেগে উঠেছে এই যে এই কৃষি ব্যবস্থা তা কার জন্য লাভজনক?

কৃষি নীতির মাধ্যমে যে নিরাপদ খাদ্যের কথা বলা হচ্ছে তার বাস্তবায়ন কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। কেননা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্য শৃঙ্খলকে সমুন্নত রেখে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করার কোন প্রচেষ্টা তা সেভাবে লক্ষ্য করা যায় না। বরঞ্চ অধিকমাত্রায় খাদ্য উৎপাদনের নামে রাসায়নিক সার, বিষ, কীটনাশকসহ ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মাটি, পানি, বাতাসকে নানামাত্রায় দূষিত করছে। একইভাবে যে পদ্ধতিতে মাছ চাষসহ, হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল পালন করা হয় সেটিও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের নির্দেশক নয়। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদনের উৎসগুলোকেই আমরা নানা ভাবে করে তুলেছি অনিরাপদ। একইভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে ভেজাল ও দূষণের মাধ্যমে প্রস্ততকৃত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হয়ে উঠেছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও ভেজালবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নানা ধরনের প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু অনৈতিকভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় যারা এই কাজগুলো করে তাদেরকে নানা ধরনের জরিমানা ও শাস্তি দিয়েও এটিকে প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়েই এটি সকলের জন্যই অনিরাপদ হতে থাকে। তাই অনিরাপদ খাদ্য উৎস ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত খাদ্য সকলের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়না। কিন্তু প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে খাদ্যের মূল উদ্দেশ্য প্রতিটি প্রাণের শারীরিক বিকাশ ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। যা বিদ্যমান অনিরাপদ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ভেতর দিয়ে কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জনস্বাস্থ্যের উপর। পুষ্টিহীনতা ও রোগব্যাধি বাড়ছে আর সেই সাথে কমে যাচ্ছে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আবার পরিবেশগত বিবেচনায় প্রকৃতিতে যত প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে তা প্রকৃতির এক জটিল খাদ্য শৃঙ্খলের ভেতর দিয়ে টিকে থাকে। একক প্রজাতি হিসেবে মানুষ যেভাবে নির্র্দিষ্ট কয়েকটি খাদ্য শস্যকে বিবেচনায় নিয়ে বাকিদের ধ্বংস করে খাদ্য উৎপাদন করছে তার নীট ফলাফল হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী। কেননা অনিরাপদ খাদ্য শুধু প্রাণের দৈহিক বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোধ করে তাই-ই নয়, এটি অধিকাংশ রোগের কারণও বটে। গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীতে অধিকাংশ রোগের উদ্ভব হয়েছে অনিরাপদ খাদ্য থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে- অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের জন্য প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয় যার মধ্যে মারা যায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ্য মানুষ।

খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থ অবস্থা। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিটি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে সুস্বাস্থ্য একটি অন্যতম সার্বজনীন স্বীকৃত নির্দেশক। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) অনুসারে চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব এবং অনুচ্ছেদ ১৮(১) অনুসারে জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যে উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য। সংবিধানেই ১৮ (১) ধারায় জনগণের পুষ্টির মান উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ এর তিনটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও ১৯টি লক্ষ্যমাত্রায় কোনটিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন নির্র্দেশনা নেই। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা পর্যালোচনা করলে এটিকে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির পরিবর্তে জাতীয় চিকিৎসা নীতি বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন দরকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তেমনি প্রয়োজন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা। আমরা যদি পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তাহলে প্রতিকারমূলক ব্যস্থার উপর চাপ কমে। পুষ্টির মান উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে মানুষের অসুস্থতা কমে আসবে। কোন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যতই উন্নত হোক না কেন চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিত্য নতুন রোগ ও ভাইরাস জনিত মহামারী কেবল চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। চলমান করোনা মহামারী তার জীবন্ত উদাহরণ। হয়তো করোনা থেকে পৃথিবী মুক্ত হবে কিস্তু অনিরাপদ খাদ্য ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে করোনা ভাইরাসের মত সংকট পৃথিবীকে মোকাবেলা করতেই হবে। তাই এই ধরণের সংকট মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। আমরা দেখছি চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে তারাই। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে তাঁরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখানে অনেক প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে সাথে যুবক ও মধ্য বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি গভীরভাবে গবেষণা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের যে কাঠামোটি রয়েছে তা রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাল একটি কাঠামো। যদিও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীর ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে, সেই সাথে রয়েছে ঔষধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অপ্রতুলতা। এই খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে কাঠামোটিকে আরো কার্যকরি ও গতিশীল করা দরকার। কিন্তু ব্যাপক অর্থনৈতিক ব্যয় ছাড়াও কিছুটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার মাধ্যমে এই কাঠামোকেই অবলম্বন করে দেশে একটি আদর্শ চিকিৎসা কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। এর মাধ্যমেই দেশের দূর্গম এলাকা ও প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগকে নিশ্চিত করা যেতে পারে। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে- স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপর। আর এটি তখনই সম্ভব হবে যখন সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যা কোনভাবেই প্যাকেটজাত পুষ্টি সরবরাহ করে সম্ভব নয়। এর জন্য দেশের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়াকে করতে হবে নিরাপদ। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাবো আমাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকল নীতিমালা, আইন ও বিধিমালায়। যেখানে থাকবে দেশের সমৃদ্ধ প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও তার সুনিপুণ বাস্তবায়নের কর্মকৌশল।

happy wheels 2

Comments