নদ নদীতে বাড়ছে পানি ॥ জমজমাট নৌকার হাট
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) থেকে
নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাবিত হওয়ার আগেই নৌকার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন। তাই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকাতে চলছে নৌকা তৈরি ও বিক্রির ধুম। এসব এলাকার মানুষজন জেলার বৃহত্তর ঘিওর হাটে ভিড় করছেন নৌকা কিনতে।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম ও দৌলতপুরের দুর্গম এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব হয় না। তাই বর্ষা আসার আগেই ঘিওর ও দৌলতপুর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠ মিস্ত্রীরা নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মালামাল এবং জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘদিনের।
নৌকা শিল্পের জন্য বিখ্যাত ঘিওরের কারিগড়দের তৈরি নৌকা স্থানীয় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মিস্ত্রী পাড়ায় নারী-পুরুষ। বর্ষার আগমনে মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার রাস্তাঘাট ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। বর্ষার পানি ভিড় জমায় বাড়ির আঙ্গিনায়। এ সময় এসব অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে উঠে নৌকা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই জেলার ঘিওর উপজেলা সদরের প্রধান ঈদগাহ মাঠের নৌকা বিক্রির হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠের ওই হাটে ক্রেতাদের জন্য থরে থরে সাজানো অবস্থায় দেখা মেলে বাহারি রকমের কয়েকশ নৌকা।
ঘিওর বাজারের কাঠ মিস্ত্রী রবি সূত্রধর, নিলকমল সূত্রধর, মাসুদ, হারেজ জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে তারা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে তাদের কারখানা থেকে ৮/১০টি নৌকা তৈরি করে ঘিওর, দৌলতপুর, বরংগাইল, তরা, মহাদেবপুর হাট বাজারে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে লোহা ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে। নৌকার আকার ও প্রকার ভেদে ৪ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত একটি নৌকা বিক্রি হয়। তবে লাভের অংশ আগের থেকে কমে গেছে। কাঠ মিস্ত্রি সুবল দাস বলেন, “আমার দাদার আমল থেকেই দেখি এই নৌকা বানানো। বর্ষা এলেই ধামধুম শব্দ হয় মিস্ত্রী পাড়ায়। প্রতিবছরের মত এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় কিছু পূর্বে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে নৌকা তৈরি শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত করে থাকেন। বর্তমানে এলাকার ছোট ডিঙ্গী ও কোষা নৌকার কদর বেশি। কড়ই, জাম্বল, আম ও কদম কাঠের নৌকা বেশি চলে।” এদিকে তিনি দুঃখ করে বলেন, “সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় আমরা এ ব্যবসা অনেক কষ্ট দুঃখের মধ্যে টিকে আছি।”
ঘিওরের বানিয়াজুড়ি, বালিয়াডাঙ্গা, সিংজুড়ি, বেগুন নারচি ও দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর, বাঁচামারা, বাঘুটিয়া, চরকাটারি, খলসি, ধামশ্বর, কলিয়া, বিনোদপুর এবং শিবালয়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র ওই বাহনটি ক্রয় করতে জমায়েত হন এ নৌকার হাটে।
সপ্তাহের প্রতি বুধবার হাটের দিন হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রেতারা নৌকাগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখেন দিনভর। এছাড়াও প্রায় সারা সপ্তাহজুড়েই কম বেশি বিক্রি হয় ওই নৌকাগুলো। ঘিওর হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা খগেন সূত্রধর জানান, লম্বায় ১০ হাত এবং পাশে ২ হাত সাইজের একটি নৌকার বিক্রয় মূল্য তিন হাজার থেকে বত্রিশ শ’ টাকা। এ রকম ১১/৩ সাইজেরটি চার হাজার, ১২/৩ সাইজের চার হাজার পাঁচ শ টাকা, ১৩/৩ সাইজের পাঁচ হাজার, ১৪/৩ সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১৫/৩ সাইজের নৌকা বিক্রিয় করেন ছয় হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্টিলের নৌকা বিক্রি করে থাকেন তিনি।
দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর এলাকার হারেজ মৃধা জানান, প্রতিবছর বর্ষার সময় তার একটি করে নৌকা ক্রয় করতে হয়। তবে এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারপরও বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় তৈরি নৌকা ক্রয় করতে পারায় অনেকটাই খুশি তিনি।