চরাঞ্চলে ভেড়া পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক পরিবার

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন

শেফালী বেগম। বাড়ি হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে হরিহরদিয়া গ্রামে। বয়স ৬০ বছর। ৮ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। বর্তমান ছেলেদের সাথে একান্ন সংসারে বসবাস করেন। তাঁর সারাদিন কাটে ছাগল ভেড়া লালন পালন করে। পশুপালন করে তিনি এসব গৃহপালিত প্রাণীদের ভাষাও রপ্ত করেছেন বলে জানান।

শেফালী বেগমের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, তিনি সুখে আছেন। তিনি বলেন, ‘ছাগল, ভেড়া পালন করে অনেক ট্যাহা পাই। ছেলেরা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমায় কোন অভাব দেয় না। আমার অসুখ হলে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যায়। আবার যখন যা খেতে চাই হাট বাজার থেকে কিনে এনে আমাকে দেয়।’ শেফালী বেগম গত বছর ৫০ হাজার টাকার ভেড়া বিক্রি করেছেন বলে জানান। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে ১৪টি ভেড়া, ১২ টি গরু এবং ৪টি ছাগল রয়েছে।

Exif_JPEG_420

ভেড়া একটি নিরীহ প্রাণী। এরা চারণভূমিতে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেতে পছন্দ করে এবং দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। ভেড়া ১৫ মাসে ২ বার করে বাচ্চা দেয়। একটি ভেড়া ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যে খামারে আকার বড় হয়। ভেড়া শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এছাড়াও দানাদার (ভুষি ) খাবার সরবরাহ করলে আরও ভালো উৎপাদন আশা করা যায়। হরিরামপুর চরাঞ্চলে অনাবাদী পতিত জমি থাকার ফলে মাঠে সারাদিন ঘুরে খাবার খেতে পারে ভেড়া।

ভেড়া যে কোন ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। চরাঞ্চলে কাঁচা উদ্ভিদ ও লতা জাতীয় ঘাস যেমন নলখাগড়া, ক্যাইশা, কলমী, বাদলা, খরমা, দৃর্ববা, জলদুর্ববা, হেনচি, গোইছা ইত্যাদি ভেড়ার প্রিয় খাদ্য। তাই চরাঞ্চলে যারা ভেড়া পালন করেন খাবারের জন্য তাদের তেমন একটা বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় না। আর এই কারণে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামচর, নটাখোলা, হরিহরদিয়া, সেলিমপুর, বালিয়াচক, হালুয়াঘাটা, বালিয়াচক গ্রামে প্রায় শতাধিক এর বেশি ক্ষুদ্র ভেড়াপালন কারী খামারী গড়ে উঠেছে।

ভেড়া পালনকারী খামারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ না পেলেও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভেড়া পালন করে আসছেন। জরুরী অসুখ-বিসুখ হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের সাহায্যে নিয়ে থাকেন। এছাড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে থাকেন। সম্প্রতি বারসিক চরাঞ্চলে ছাগল ও ভেড়া পালনকারী খামারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ক্ষুদ্র খামারী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।

Exif_JPEG_420

চরাঞ্চলে ভেড়া পালনের কোন সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে কৃষাণী মনোয়ারা বেগম (৪০) বলেন, ‘চরে ভেড়া ছাগলের অসুখ বিসুখ হলে ডাক্তার পাওয়া না। গাছ-গাছালী ভেষজ চিকিৎসা করে থাকি। সাধারণত শীত মৌসুমে ভেড়া, ছাগলের বেশি রোগব্যাধি হয়। এ সময় ভেড়াগুলো ঠান্ডালাগা, বাদলা, খুড়া, চর্মরোগ, কৃমি, বহিঃ পরজীবি, পাতলা পায়খানা, পেটফুলা, জিমাই, মাথা ঘুরান দিয়ে পড়ে যাওয়া এসব রোগে আক্রান্ত হয়।

চরে ছাগল, ভেড়া পালনের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীরা তাদের দারিদ্র দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চরে প্রাণী সম্পদ পালনের মাধ্যমে অনেক পরিবার স্বাবলম্বীও হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে হরিরামপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘চরাঞ্চলে প্রাণী সম্পদ পালনের যথেষ্ট সুযোগ ও উপযোগি পরিবেশ রয়েছে। চরে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র খামারী প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দিয়ে আরোও দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করা হবে।’

happy wheels 2

Comments