কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে চলে ওদের সংসার
ইকবাল কবীর, চাটমোহর, পাবনা থেকে
বিখ্যাত কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তার কবিতা “মাগো ওরা বলে” কবিতায় তার খোকাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি- খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি? খোকাকে বাড়ি আসতে; প্রলুব্ধ করতে চিঠিতে মা যে ডালের বড়ির কথা উল্লেখ করেছেন ভোজন রসিক তো বটেই প্রায় সকলেই এ উপাদেয় খাবারটি পছন্দ করেন। আর এ উপাদেয় খাবার তৈরি ও বিক্রি করে চাটমোহরের প্রায় শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেবল জীবিকা নির্বাহ নয় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, রোগ ব্যাধিতে ওষুধ পথ্যের যোগান দিতেও ডালের কুমরো বড়ি তাদের ভরসা।
চাটমোহর পৌর সদরের দোলং মহল্লার নিরঞ্জন ভৌমিক জানান, চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এ ছয় মাস কুমরো বড়ি তৈরি হয়। এর প্রধান উপকরণ ডাল। বর্তমান প্রতি কেজি এ্যাংকর ডাল ৩৫ টাকা, খেশারী ডাল ৬০ টাকা, ছোলার ডাল ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ডালের দাম কিছুটা বেড়েছে। ডাল ধুয়ে মিলে ভাঙানো হয়। ভাঙানো ডালের গুড়ার সাথে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা, গুয়ামুড়ি, জিরা মিশিয়ে অনেক্ষণ ধরে মেশানো হয়। পরে বড় টিনের উপরিভাগ তেল দিয়ে মুছে তার উপর শুকাতে দেওয়া হয় ডালের কুমড়ো বড়ি। ভালো করে শুকাতে তিন দিন রোদে দিতে হয়। বৃষ্টিতে ভিজলে অথবা না শুকানো অবস্থায় কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সব কুমরো বড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, এ এলাকার সুনীল, দুলাল, গৌতম, ঘুঘু, ফটিক, শম্ভু, ইদ্রিস আলী, প্রভাত দাস ও মানিক ভৌমিকের পরিবারসহ প্রায় ৩০ পরিবার কুমরো বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে বছরের ছয় মাস জীবিকা নির্বাহ করেন। চাটমোহর থানা বাজারসহ রেলবাজার, মির্জাপুর, হরিপুর, ধানকুনিয়া, কাটাখালী হাটে এসব কুমরো বড়ি বিক্রি করা হয়। ভোজন রসিক প্রবাসীরা দেশে বেড়াতে আসলে প্রবাসে ফিরে যাওয়ার সময় ডালের কুমরো বড়ি সাথে নিয়ে যেতে ভোলেন না।
নিরঞ্জনের মা উষা রাণী ভৌমিক বলেন, “ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কাজ শুরু করতে হয়। আমি প্রায় ৪০ বছর যাবত কুমড়ো বড়ি তৈরি করে আসছি।” তিনি আরও বলেন, “জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সংসারে কিছুটা বাড়তি স্বচ্ছলতার আশায় আমাদের বৌঝিঁ রা এ কাজে সহায়তা করে। মূলত মেয়েরা বড়ি তৈরি ও শুকানোর কাজ করে আর পুরুষেরা তা বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে থাকে”।