সময় এখন নারীর
শ্যামনগর থেকে মারুফ হোসেন মিলন , সাতক্ষীরা ফজলুল হক এবং তানোর ,রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার ও অনিতা বর্মণ
নারীকে পুরুষের মত সম সুযোগ প্রদানে ও নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দুর করতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের ব্যক্তি কেন্দ্রিক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এজন্য সরকারি, বেসরকারি এবং স্থানীয় জন উদ্যোগের মাধ্যমে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। একই সাথে নিজের সাহস যোগ্যতা, আত্মনির্ভরশীলতা ও সুশিক্ষার মাধ্যমে নারীদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
“সময় এখন নারীর: উন্নয়নের তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম শহরে কর্মজীবন ধারা” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে আজ (৮ মার্চ) সাতক্ষীরার, শ্যামনগরের প্রত্যন্ত গাবুরার চকবারা গ্রামে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বারসিক’র সহযোগিতায় চকবারা মানবকল্যাণ জেলে বাওয়ালী আইএফএম কৃষক সংগঠন ও এসএসএসটি, গাবুরা ইউনিট এর যৌথ উদ্যোগে উক্ত দিবসটি পালিত হয়। শুরুতে শান্তির একটি পায়রা উড়িয়ে একটি বর্ণাঢ্য রালি শুরু হয়। র্যালিটি সংগঠনের কার্যালয় থেকে শুরু করে ওয়াপদা রাস্তা ঘুরে এসে সংগঠনের সামনে এক আলোচনায় মিলিত হয়।
চকবারা মানবকল্যাণ জেলে বাওয়ালী আই এফ এম কৃষক সংগঠন এর সভাপতি সিদ্দিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্থানীয় যুবক আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গাবুরার ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী শেখ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান, সংগঠনের রাশিদা বেগম, হালিমা বেগম, বারসিক কর্মকর্তা মননজয় মন্ডল, সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিমের মারুফ হোসেন মিলন, ফিরোজা খাতুন প্রমুখ। আলোচনায় বক্তারা মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জীবন দর্শন নিয়ে আলোকপাত করেন। আমাদের দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সকল ক্ষেত্রে পুরুষের মত নারীর গুরুত্ব কোন অংশে কম নয় এজন্য দায়িত্ববান ও সমাজ সচেতন সকলকে নারীর জ্ঞানকে সম্মান, শ্রদ্ধা এবং নারীকে ভালোবাসা, স্নেহ ও বন্ধুত্ব সুলভ আচরণে আবদ্ধ করা উচিত।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারসিক’র সহযোগিতায় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম ও মাছখোলা বেতনা নারী সংগঠনের আয়োজনে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে মাছখোলা বেতনা কৃষি নারী সংগঠনের সভানেত্রী আশুরা বেগমের সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সহসভাপতি শামসুরনাহার মুন্নী, নির্বাহী সদস্য বাহালুল করিম, সাহিত্য ক্রীড়া সম্পাদক মফিজুল ইসলাম অক্ষর, সদস্য মুরাদ হোসেন, চয়ন চৌধুরি, সুমাইয়াতুল কোবরা, বারসিকের যুব সংগঠক ফজলুর হক ও কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর গাজী মাহিদা মিজান প্রমুখ। সভার একে-অপরের মধ্যে কথাপকথনের মধ্যে দিয়ে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস কি? কেন দিবস টি পালন করা হয়।
নারীরা যে দেশের সকল স্থানে আসতে জায়গা করে নিচ্ছে, যেমন অর্থনীতিতে, বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায়, সামাজিক, রাজনৈতিক এমন কি সকল ক্ষেত্রে যে পুরুষের পাশাপাশি বিশেষ অবদান রেখে চলেছে উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করা হয়। পরিশেষে শিক্ষা, সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সহসভাপতি শামসুরনাহার মুন্নী ও বারসিকের কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর গাজী মাহিদা মিজান কয়েগজন মহীষয়সী নারী জীবনের গল্প শোনান। মাছখোলা বেতনা কৃষি নারী সংগঠনের সভানেত্রী আশুরা বেগম বলেন, “গ্রামের মধ্যে এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে নিজেদেরকে অনেক ধন্য মনে করছি। কারণ গ্রামের মধ্যে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস পালন করতে দেখা যায় না বললেই চলে। আজ কিন্তু গ্রামের নারীরা সকল ক্ষেত্রে বেশি নির্যাতিত হয়।” তাই তিনি নারী দিবসটির মধ্যে দিয়ে সকল নারীকে নির্যাতনের প্রতিবাদমুখর হওয়ার আহবাদ জানান।
এদিকে ‘‘সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা বদলে দিচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্মজীবন ধারা” এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে রাজশাহীর তানোরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয়েছে। তানোর উপজেলা ডাকবাংলো চত্বরের সামনের রাস্তায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের আয়োজেন মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার ফাতেমা খাতুন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা: শওকাত আলীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বন্দনা রাণী প্রামাণিক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান, প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা বারসিক কর্মকর্তা অনিতা রাণী, ব্রতীর কর্মকর্তা জয়নব খাতুন, ব্র্যাক কর্মকর্তা সেলিনা খাতুনসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও সুধীজনরা অংশ নেন।
নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন নারী সংগঠনের তৈরিকৃত দ্রব্যের ৮টি স্টল অংশগ্রহণ করছে। মেলায় হরিদেবপুর নারী উন্নয়ন সংঘ, অংশগ্রহন স্টলে ছিলো বৈচিত্র্যময় সবজি বীজ । যেমন: বরবটি, পুইশাক, পেঁপে, ঝিঙ্গা, থুকি ঝিঙ্গা, তরাই মিষ্টি কুমড়া,লাউ, চাল কুমড়া,শিম, ঢেঁড়শ, করলা,লালশাক ,তুকমা,বৃন্দাবন তুলসী, সাদা কুচকরি, জৈষ্ঠ মধু । উন্নত চুলা যেমন : আট মুখি উন্নত চুলা, ইঞ্জিল চুলা, দুই মুখি উন্নত চুলা ,এক মুখি উন্নত চুলা, তিন মুখি চুলা, শিকের এক চুলা । বারসিকের বিভিন্ন ধরনের পোষ্টার, হারবেরিয়াম । এতে অংশগ্রহণ করেন গোকুল মথুরা স্বপ্নচারী উন্নয়ন সংস্থার সদস্য ও বারসিক এর কর্মীবৃন্দ । বারসিক এর স্টল পরিদর্শনের সময় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, নারী অধিকার নিয়ে ঐক্যমতের পথটা কিছুটা হলে ও আলোর মুখ দেখেছেন বলে তিনি মনে করেন ।