দুর্যোগ সামলে টিকে আছেন হাওর গুচ্ছ গ্রামের মানুষ

মদন, নেত্রকোনা থেকে সুমন তালুকদার
সামাজিকভাবে অধিকারহীন, সুবিধাবঞ্চিত, বৈষম্যের শিকার, ভূমিহীন ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয়দাতা মানুষগুলোই সাধারত গুচ্ছগ্রামে স্থান পান এবং অধিকারবঞ্চিত মানুষগুলোই জীবনের এক দুর্যোগ থেকে আরো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেন। নতুন জায়গা, পরিবেশ, ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষ একত্রিত হয়। ডিঙ্গাপোতা হাওর, গণেষের হাওর ও দখিনা হাওরে মাঝামাছি স্থানে অবস্থিত এই গুচ্ছগ্রাম। হাওর কেবল জলের দেহ নয়-হাওর বাস্তুতন্ত্র যা আমাদের দেশের মাটি, পরিবেশ প্রকৃতি গঠনে ও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে ও বহুমুখী ভূমিকা পালন করে৷

প্রতিবছর হাওরের দুর্যোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। বিশাল জলরাশির মাঝে ভাসমান এক দ্বীপের মধ্যে প্রায় ৫০টি পরিবারের ২৩৫ জন মানুষের বসবাস। নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার হাওর অধ্যুষিত একটি ইউনিয়ন গোবিন্দশ্রী। ২০১৯ সালে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হয়। গুচ্ছ গ্রামের ঘরগুলো হস্তান্তরের পর বারসিক গুচ্ছ গ্রামের চারাপাশে পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় ফল ও পানি সহনশীল গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।


তলার হাওরের কৃষক সংগঠন, যুব সংগঠন এর আয়োজনে বারসিক’র সহযোগিতায় ২০২০ সালে বন্যা পরবর্তী সময়ে পানিসহনশীল গাছ রোপণ করে নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি হাঁস মোরগ পালনের জন্য সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বসতভিটার সামান্য জমিতে সবজি চাষের জন্য বারসিক গুচ্ছ গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করে এবং গত দুই বছর ধরে শীত ও বর্ষাকালীন সবজির বীজ বিতরণ করা হয় ৫০টি পরিবারে। সবজি বীজ পেয়ে গুচ্ছ গ্রামের ৫০টি পরিবার তাদের বসতভিটার সামান্য জমিতে সবজি চাষ করেছেন।


২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে গুচ্ছ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকল বসতভিটার চারপাশ, ঘরে চালে, টাওয়ার পদ্ধতিতে বৈচিত্র্যময় সবজি যেমন- লাউ, মূলা, শিম, ডাটা, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, পুঁইশাক, চুকাই, পেয়াজ, রশুন, মরিচ, বেগুন, পেপে, আখ, পাটশাক,্ করলা ইত্যাদি ফসলে ৫০টি পরিবারে বসতভিটা ভওে গেছে। গ্রামবাসীরা জানান, তারা নিজেদের উৎপাদিত সবজি খাচ্ছেন, বাজার থেকে তাদের কোন সবজি কিনে খেতে হয়না বরং কিছু কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করছেন। তারা প্রতিটি সবজির বীজ সংগ্রহ করে রাখছেন নিজ নিজ ঘরে। গুচ্ছ গ্রামের নারীরা সবজিচাষ, ফলের গাছ রোপণ করে একটি সবুজ গ্রাম তৈরি করেছেন। গ্রামে এখন আম, জাম, কাঠাঁল, লিচু, নারিকেল, লেবু, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, ডালিম, কলা, সুপারি গাছ ধীরে বড় হচ্ছে। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে পাশের গ্রামের ৩৭ জন নারীকে বীজ প্রদান করেছেন। গোবিন্দ্রশ্রী হাওর বীজ ঘরে সীম, ডাটা, দেশীলাউ, মিষ্টি লাউ এর প্রায় তিন কেজি বীজ প্রদান করেছেন।


তারা হাঁস, মোরগ, কবুতর, গরু, ছাগল পালন করছেন। এখন সরকারি সেবা পরিসেবার সাথে যুক্ত হবার জন্য বারসিক’র পরামর্শ অনুযায়ী উঠোন বৈঠক ও সরকারি সেবাদানকারী অফিসে যোগাযোগ করছেন। এভাবেই গুচ্ছ গ্রামের নারী-পুরুষরা স্বপ্ন দেখছেন সকলের সাথে সমানভাবে মর্যাদার সাথে বাঁচার জন্য।

happy wheels 2

Comments