বারসিক-কৃষক যৌথ গবেষণার মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবেলার প্রচেষ্টা

মানিকগঞ্জ থেকে মো: মাসুদুর রহমান

চলতি বোরো মৌসুমে বারসিক মানিকগঞ্জ কর্ম এলাকার নয়াবাড়ী, বরুন্ডী, সরুপাই, বাংগরা গ্রামে ৫১টি ধান জাতের সমন্বয়ে ৩টি মূল পরীক্ষণ প্লট, একটি জাত সংরক্ষণ প্লট এবং ২টি বীজ বর্ধন প্লটে কৃষক গবেষক ফোরামের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে চারা রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি।
রোপণকালীন সময়ে উপস্থিত কৃষক কৃষাণীদের পক্ষে আদরজান বেগম বলেন, ‘আমি বিগত ৩ বছর আগে গবেষণা প্লট থেকে মুড়ি তৈরীর জন্য ময়নাটিয়া ধানের বীজ নিয়েছিলাম। এবছর আমি ৩ জনকে ১৫ কেজি বীজ দিয়ে সহায়তা করেছি এবং আরো বীজের চাহিদা থাকায় ৩ বিঘা জমিতে রোপণ করেছি।’

বারসিক-কৃষক যৌথ গবেষণার বিগত ৮ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে ৮টি জাত নিয়ে আইরমারা গ্রামে গবেষণা করা হয়। এলাকার কৃষক কর্তৃক মকবুল, কাইশ্যাবিন্নি, রাজভোগ জাতের ধান নির্বাচিত হয়। ২০১৫ সালের বোরো মৌসুমে গবেষণায় জাত সংখ্যা ছিল ১৩টি। বাশমতি ধানের জাত এলাকায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে গবেষণায় মোট জাতের সংখ্যা ৮টি। কাইশ্যাবিন্নি ধানের জাত এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার উৎপাদন ছিল হে: প্রতি ৫.৪৪ টন।

এদিকে ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে গবেষণায় জাত সংখ্যা ছিল ৮টি। এলাকার কৃষক কর্তৃক কুচমুচ, এম-২৫২, ময়নাটিয়া, মকবুল জাতের ধান নির্বচিত হয়। অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে ২০ জন কৃষক মকবুল ও ময়নাটিয়া জাতের ধান বীজের চাহিদা করেন। মকবুল জাতের হে: প্রতি উৎপাদন ছিল ৮.১৯ টন। উল্লেখ্য, ময়নাটিয়া জাতটি মুড়ি তৈরির জন্য খুবই উপযোগি। আইরমারা, কৈতরা, বাইতরা, ব্রীকালিয়াকৈর, নয়াপাড়া, ছোটকালিয়াকৈরসহ কয়েকটি গ্রামে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ হচ্ছে এ জাতটি। অন্যদিকে ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে গবেষণার আওতায় জাত সংখ্যা ছিল ৬টি। এলাকার কৃষক কৃষাণীগণ বৌরানী ও দারশাইল জাতের ধান নির্বাচন করেন। বৌরানীর হে: প্রতি উৎপাদন ১০.১৫ টন এবং দারশাইল হে: প্রতি উৎপাদন ৯.৫০ টন।

এছাড়া ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে নয়াবাড়ি গ্রামের জাত গবেষণা প্লটে ৬টি জাত নিয়ে এলাকা উপযোগি ধানের জাত গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তীব্র তাপমাত্রায় ২০১৯ সালের বোরো মৌসুমে সরেজমিনে প্রায় সকল জমির ধানে চিটার পরিমাণ বেশি হয় এবং সেচের পানি বেশি লাগায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়। এ্েক্ষত্রে গবেষণাধীন জাতগুলোর মধ্যে জুন-টি জাত খরা সহনশীল জাত হিসাবে পরিক্ষীত হয়। দেখা যায়, অন্যান্য জাতের তুলনায় জুন-টি জাতটির শিকড়ের দৈর্ঘ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। অন্যান্য জাতের তুলনায় পানি কম লেগেছে এবং শীষপ্রতি পুষ্ট দানার সংখ্যা ছিল ১০৮টি এবং চিটার সংখ্যা ছিল ২২টি। এ ধানের হে: প্রতি উৎপাদন ৮.১৯ টন। উপরোক্ত কারণ সমূহ বিবেচনা করে ২৮ জন কৃষক জুন-টি জাত পছন্দ করেন।

তাছাড়া ২০২০ সালে বোরো মৌসুমে ৯টি জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। সুশীল (কৃষক কর্তৃক উদ্ভাবিত) জাতটি চিকন ও উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। উৎপাদন ছিল হে: প্রতি ৯.১৭ টন, বাশমতি (পাকিস্তানি) ৭.৩৭ টন, জুন-টি ৯.১টন। ২০২১ সালে বোরো মৌসুমে নয়াবাড়ি গ্রামের জাত গবেষণা প্লটে ৯টি জাত নিয়ে এলাকা উপযোগি ধানের জাত গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। সুগন্ধিও চিকন জাতের ধান হিসাবে ১২ জন কৃষক বাশমতি (পাকিস্তানি) ধান বীজের চাহিদা করেন। হে: প্রতি এ ধানের ফলন ১১.১৪ টন।
এই প্রসঙ্গে কৃষক গবেষক ফোরামের আহবায়ক মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এলাকা উপযোগি ধান জাত নির্বাচনের লক্ষ্যে পরীক্ষাধীন ধান জাতের সংখ্যা এ বছর বাড়ানো হয়েছে এবং বহুস্থানিক পরীক্ষার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কৃষক নিয়ন্ত্রিত জাত সংরক্ষণ কার্যক্রম আরো বেশি শক্তিশালীকরণের জন্য মানিকগঞ্জ কৃষক গবেষক ফোরামের সদস্যগণ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।’

happy wheels 2

Comments