নদীর তীরে ‘জামিল বোরো’ ধানের চাষ
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ, নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা চালায় অনেক পেশার মানুষ। জেলেদের মাছ ধরা, নারী-পুরুষদের গোসল করা, মাঝিদের নৌকা চালান, ব্যবসায়ীদের হাট বাজার গড়ে তোলা, কৃষকদের ফসল চাষ, গবাদী পশুকে গোসল করানোসহ নানা ধরনের কাজে নদী মিলে আছে এক সুতায় যুগ যুগ ধরে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কালিগংঙ্গা নদী। কৃষকদের মুখে শোনা যায়, এক সময় নদীতে ফেরি চলতো আর বড় বড় পাটের পানসি চলতো বাদাম উড়িঁয়ে ও গুন টেনে টেনে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর, আউকপাড়া, হিজলাইন গ্রামগুলো কালিগংঙ্গা নদীর তীরঘেঁষে গড়ে উঠেছে।
একসময় এখান কার কৃষকরা সাইল্যা দাওয়া কাটতে যেতো সিলেট অঞ্চলে। সেখান থেকে কৃষকরা জামিল বোরো (কালো) ও সাইল বোরো (লাল) ধানের জাত নিয়ে আসেন। সেই জাতের ধান এখনো টিকিয়ে রেখেছেন নদীকেন্দ্রিক ৩-৪টি গ্রামের কৃষকরা। তাঁরা বলেন, ‘এই ধান চাষ করতে কৃষকদের তেমন খরচ হয় না। প্রকৃতির উপর নির্ভর কওে এই ধান আবাদ করা যায়।’
কৃষকরা আশি^ন মাসে জামিল বোরো কাঁদার ভিতর বীজতলা করেন। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে নদীর তীরে ধান রোপণ করেন। আর চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি এই ধান কাটেন। এলাকার কৃষকরা বিগত ২৫-৩০ বছর যাবৎ এই ধানের চাষ করে আসছেন সাফল্যের সাথে।
কৃষকরা জানান, সিলেট অঞ্চলে ধানগুলো মিশিয়ে বোনা। তাই ধানগুলো তাদের এলাকায় কালো ও লাল মিশে গেছে। যেহেতু ধানগুলো এক সাথে পাকে তাই কৃষকদের কোন সমস্যা হয়না। তাঁরা জানান, এই ধানের ভাত খেতে মিষ্টি লাগে। এমনকি এই ধানের খড়গুলোও মিষ্টি। তাই গবাদিপশুর খাবারের জন্য এটি খুবই চাহিদাসম্পন্ন। এই ধানের ভাতের মার খুব পুষ্টিকর।
এই প্রসঙ্গে কৃষক তারা মিয়া বলেন, ‘আমরা ধানের খড়ের আটি ৪ টাকা করে বিক্রি করি।’ কৃষক মিহাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৩০ শতাংশ জমি থেকে ৪-৫ মণ ধান পাই। এই ধান চাষে কোন রাসায়নিক সার দিতে হয় না। নদীর তীরের পলি মাটিই সার হিসেবে কাজ করে। আমরা সারাবছর এই ধানের ভাত খাই। আমাদের রোগ কম হয়, শক্তি বেশি পাওয়া যায়।’