বৈচিত্র্যময় বীজ সংরক্ষণে নারীর অবদান

ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
কৃষি গ্রাম বাংলার আদি পরম্পরা জ্ঞান ধারণ করে, এখানকার প্রতিবেশের মত করে এখানকার আবহাওয়া জল, ভূমি সবকিছু বিবেচনা নিয়েই নারীরা বৈচিত্র্যময় বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের চর্চা করেন। কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চায় নানামূখী জ্ঞান নানামূখী অনুশীলনকে সম্মান জানিয়েই এখানকার মত করে তারা কৃষিচর্চা করছেন। এই কৃষিচর্চার অন্যতম কাজ হলো বীজ সংরক্ষণ ও বিনিময়। বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নারীরা সবচে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি তারা নিরন্তরভাবে বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য কৃষিচর্চায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।


ঘিওর উপজেলার গাংডুবী, ঠাটাংগা, কেল্লাই, দিয়াইল, বানজান, রামদিয়া নালী, কুন্দুরিয়া, হেলাচিয়া, জয়নগর, বেগমনগর গ্রামের কৃষাণীরা তাদের উৎপাদিত ফসলের বীজ সংরক্ষণে অবদান রাখছেন। রামদিয়া নালী গ্রামের কৃষাণী আকলিমা বেগম বলেন, ‘এবছর আমি বারসিক’র পরামর্শে আট জাতের মসলা চাষ করে বাড়িতেই বীজ রেখেছি।’ উক্ত গ্রামের সীমা রানী সরকার বলেন, ‘আমি সারাবছরই বাড়ির জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও জমির আইলে মসলার চাষ করি। বাজার থেকে কোন মসলা কিনতে হয়না, আমি বীজগুলো সংগ্রহে রেখে পরবর্তী সময়ে আবার লাগানোর জন্য ব্যবহার করি। আমি বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ করি।’


জয়নগর গ্রামের কৃষাণী জাহানারা, পিংকি, ফালানি, নমিতা, আল্পনা, বন্যা, কল্পনারা জানান, আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসলের বীজ নিজেদের মধ্যে মৌসুমভিত্তিক বীজ বিনিময় ও বীজ সংরক্ষণ করি। এভাবে বীজ সংরক্ষণে থাকায় সাধারণত কোনো ফসল লাগানোর জন্য আলাদা করে বীজ কিনতে হয় না বা বীজের জন্য বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয় না। তা ছাড়া হাতের কাছে বা পাড়াপ্রতিবেশীদের নিকট বীজ থাকলে যেকোনো সময় তা রোপণ করা যায়।


গাংডুবী গ্রামের সন্ধা রানী মন্ডল (৬২) বলেন, ‘বারসিক’র পরামর্শে বীজ সংরক্ষণ করতে শেখার পর থেকে সাধারণত সারাবছরই বাড়িতে সবজি ও ফল থাকে যা আমাদের নাতি-পুতিরা ও পাড়াপ্রতিবেশীরা খেতে পারে।’
বাংলাদেশে যারা কৃষিপ্রতিবেশ বিদ্যা চর্চা করেন নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, নানা পথ পদ্ধতির সবাই আমরা নিজেদের উৎপাদিত ফসল ও মসলা জাতীয় ফসলের বীজ নিজেদের মধ্যে বিনিময়, অভিজ্ঞতা ও সহভাগিতা করে থাকি। আমরা সবাই মিলে আলোচনার মধ্যে ঠিক করি এবং কোন কোন বিষয়ে নিজেদের ঐক্য থাকা দরকার তা আগামী দিনগুলোতে নিজেদের টিকে থাকতে পথ দেখাবে।

happy wheels 2

Comments