একজন প্রকৃতিবন্ধু কৃষক কামরুল হাসান বাদশা

নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রানী সিংহ
কৃষক সংগঠক, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন, জৈব কৃষিচর্চা, ব্যবহার ও সম্প্রসারণ করে নেত্রকোনা অঞ্চলে কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক পরিচিতমুখ প্রকৃতিবন্ধু কৃষক কামরুল হাসান বাদশা মিয়া না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন।

বারসিকের সহায়তায় জৈবকৃষি র্চচাকারী গোলাম মোস্তফার বাড়িতে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের মাধ্যমে শুরু হয় জীবনের গল্পের। সেখানে তারা ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং আগ্রহ প্রকাশ করেন ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরি করার। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়না বাদশা মিয়ার। পরর্বতীতে বারসিক’র সহায়তায় ৫টি হাউজ তৈরির উপকরণ এবং কেঁচো দিয়ে সহায়তার মাধ্যমে শুরু হয় ভার্মি কম্পোষ্ট চর্চা। বর্তমানে নিজের গ্রামেই ৩৫ জন নারী-পুরুষ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যহারের সাথে যুক্ত। নিজেদের চর্চা সম্প্রসারণে অন্যদেরকেও উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। তাদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে ময়বাগড়া, রায় বাগড়া, সনুরা, পঁচাশিপাড়া, দড়িজাগি, বানিয়াজান, মাটিকাটা, দূর্গাশ্রম, কৃষ্ণপুর, আইমা, হাসামপুর, লাইটগ্রাম, দেওপুরসহ ১৭টি গ্রামে ভার্মি কম্পোস্ট চর্চা শুরু করছে কৃষক-কৃষাণীরা। কম্পোস্ট সার তৈরির উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে নিজ এলাকার বাইরে প্রায় ৫০ জন কৃষক-কৃষাণীকে কেঁচো দিয়ে সহায়তা করেছন যারা কম্পোষ্ট সার তৈরির চর্চা শুরু করেছে।

কলকারখানা বেড়েছে, যন্ত্র বেড়েছে, শিল্প বেড়েছে, বেড়েছে কোম্পানি, বাড়ছে এক দেশ থেকে অন্য দেশকে জানার ইচ্ছা, বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে চাহিদা। মানুষের এই চাহিদা পূরণে বাণিজ্যিকিকরণ চিন্তাধারা আমাদের ভেতরে প্রবেশ করেছে। যতই আমরা প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমাদের জ্ঞান অর্জনের উৎস ছোট হতে হতে নোটপেডে এসে পৌছেঁছে। এ থেকে বাদ যায়নি আমাদের কৃষিও। রাসায়নিক কৃষিতে মাটিপানি বায়ু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। জমিতে বেশি ফলন পেতে গেলে যে পরিমাণ গোবর সার প্রয়োজন তা সব কৃষকের নেই। কৃষকেরা বাজারের সার বিষের দিকে ঝুঁকছে। নিজেরদের চর্চা, নিজেদের বীজ, নিজেদের মাটি সুরক্ষা কালের বিবর্তনে আধুনিকতার হারিয়ে যাচ্ছিল।


কৃষক বাদশা মিয়া রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষকদেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন কৃষক আইপিএম ক্লাব। কৃষকরা বিশ^াস করেন মাটিকে ভালো রাখার। মাটির জৈব উপাদান ঠিক রাখার। অধিক ফলনের আশায় অন্য কিছু ব্যবহার করলেও তারা বিশ^াস করেন মাটিকে ভালো রাখে উর্বর করে গোবর সার। কিন্তু কৃষকের ঘরে যে পরিমাণ গোবর সার থাকে তা দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তারা তাদের চর্চাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের সংরক্ষিত গোবর নষ্ট না করে এটাকে আরো উন্নত করে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বেশির ভাগ কৃষক-কৃষাণীদের ধান চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষাবাদ র্পাশ^বর্তী অন্যান্য গ্রামের চেয়ে বেশি। অন্যান্য ফসল চাষাবাদের করার কারণে গোবর সারের কম বেশি ব্যবহার ছিল। তারাও সময়ের সাথে সাথে গর্ত কম্পোস্ট, সবুজ সার ব্যবহার করেছেন। তিনি গ্রামে জৈবকৃষি চর্চার আন্দোলন গড়ে তোলেন।

কম্পোস্ট সার ও সবজি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে যুক্ততা তৈরি হয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়সহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, আইএফএম সি প্রকল্প, কুমিলা র্বাড, ময়মনসিংহ, শেরপুর, ঈশ^রদী, জামালপুর আনুমানিক ১০টি উপজেলার কৃষক-কৃষাণীদের সাথে। কম্পোস্ট তৈরি ও ব্যবহারের মাধ্যম দক্ষতা অর্জন করে কয়েকজন কৃষক-কৃষাণী যারা সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের জেলার গ্রামে সংগঠনে সচেতনতামূলক আলোচনা, প্রশিক্ষণে আলোচক ও প্রশিক্ষক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান সময় পর্যন্ত ৫৩ টন কেঁচো সার ও ১১০ কেজি কেঁচো বিক্রি করেছেন। তাদের কেঁচো সার ব্যবহার হচ্ছে সবজি চাষে, মৎস্য চাষে, নার্সারিতে, ফলের বাগানে। ছোট কিংবা বড় হাউজ বা চাড়ি বা রিং এ কম্পোস্ট চর্চাকারীদের প্রতিবছরে এ থেকে প্রায় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতেন। বর্তমানে এ গ্রামে অনেক কৃষক বাড়তি আয় হিসাবেও এই চর্চা করে যাচ্ছেন।


কৃষক বাদশা মিয়ার চেষ্টায় এখন আগ্রহী কৃষক-কৃষাণীদের কারিগরি সহায়তাসহ বিনামূল্যে কেঁচো দিয়ে, গ্রাম সভা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার অন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর রাজেন্দ্রপুরের জৈব কৃষি চর্চাকারী কৃষক-কৃষাণীরা। কৃষক বাদশা মিয়ার চেষ্টায় রাজেন্দ্রপুর গ্রামকে কম্পোস্ট গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলেছিলেন। গ্রামে তৈরি করেন ফসলের কালেকশন পয়েন্ট। সকল কৃষক নিজ নিজ উৎপাদিক কৃষিফসল এই পয়েন্টে এনে জমা করতেন। পাইকার এসে ন্যায্যমুল্যে কিনে নিতেন।

happy wheels 2

Comments