গুচ্ছগ্রামে নানাবিধ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিন
সাতক্ষীরা থেকে সৈয়দা তৌহিদা ইসলাম নিশি
সারাদেশে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনে তৈরি হয়েছে গুচ্ছগ্রাম। এর মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে এবং নদী ভাঙনের ফলে দূর্গত পরিবারকে সরকারি খাসজমিতে তৈরিকৃত বসতভিটাসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে অথবা একক নামে কবুলিয়্যাত প্রদান করে দারিদ্র্য বিমোচন অথবা নারী অধিকার নিশ্চিত করা, পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে সামাজিক সুরক্ষা দেয়া, শিক্ষা, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও দীর্ঘমেয়াদী পুকুর লিজ প্রদান করাসহ আয় বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয় গুচ্ছগ্রাম।
এরই প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পানখালি গুচ্ছগ্রাম তৈরি হলেও এখানে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। গুচছগ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, একাধিক সমস্যার কারণে কয়েকটি পরিবার তাদের ঘর ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। গুচ্ছগ্রামের বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে পুকুরের পানি লবণাক্ততা, অতিরিক্ত বালির কারণে কোনো প্রকার ফসল না হওয়া, সুপেয় পানির অভাবসহ খুটিনাটি বিভিন্ন সমস্যা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। গুচ্ছগ্রামের একাধিক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাদের খাওয়ার পানি আনতে হয়। এছাড়া রান্না ও গোসলের পানির জন্য গুচ্ছগ্রামের একমাত্র পুকুরটিও লোনা পানির উৎস।
গুচ্ছগ্রাম কমিটির সভাপতি সেকেন্দার আলী বলেন, ‘সরকার আমাদের এখানে মাথা গোঁজার ঠাই করে দিলেও আমরা অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ গুচ্ছগ্রামে সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, সবুজ বনায়নের অভাবে চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুরে হাপিয়ে উঠেছে জনজীবন, কোথাও যেন একটু গাছের ছায়া মিলছে না। সাথে সাথে উঠানের বালির অতিষ্ঠে কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে এখানে বসবাসরত ৪০ ঘর মানুষের। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক গুচ্ছগ্রামের একমাত্র পানির আঁধার পুকুরটি লোনা পানি থেকে মিষ্টি পানিতে পরিণত করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে জানা যায়। পুকুরটি মিষ্টি পানির আঁধার হিসেবে তৈরি করতে লোনা পানির বদলে বৃষ্টির পানি ধরতে চলছে নানা রকমের পদক্ষেপ।
এছাড়া গুচ্ছগ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সবুজ বনায়নের লক্ষ্যে নারিকেল গাছের চারাসহ বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ রোপণে সহযোগিতা করছেন। উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এখানে বসবাসরত মানুষের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চলছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষের রান্নাঘরে দেখা মেলে পরিবেশবান্ধব ও জালানী সাশ্রয়ী চুলার। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তারা তাদের রান্নাঘরকে পরিবেশবান্ধব করে তুলেছেন। এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বললে তারাও গুচ্ছগ্রামের মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এখানকার সমস্যা সমাধানে সরকারি বেসরকারিভাবে তথ্য অনুসন্ধানপূর্বক সমস্যা চিহ্নিত করে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী।