বোডা জাল: দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরার নতুন ফাঁদ!
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চলঃ
বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণ ও জোয়ারের প্লাবনে উপকূলীয় খাল, বিল ও মাঠঘাটে এখন পানির প্রবাহ বাড়ছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসছে নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছ। বর্ষা মৌসুমে উপকূলে মাছ ধরতে দেশী প্রজাতির মাছ শিকারে নানা ধরনের জাল ও বাঁশের তৈরী চাই ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে উপকূলে দেশী প্রজাতির মাছ শিকারে হাতে বোনা জাল ও বাঁশের কঞ্চির উপকরণে তৈরী একটি বিশেষ জালের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এ মৌসুমে মাছ শিকারিরা দীর্ঘদিন দুই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে আসছে। নাইলন সূতায় বোনা বুচনা জাল ও বাঁশের কঞ্চির চাই। এখন বাঁশ অপ্রতুল; আবার বুচনা জাল তৈরীতে খরচ বেশী। ফলে মাঠে-ঘাটে দেশীয় জাতের মাছ শিকারে ব্যবহার করা হচ্ছে এ অঞ্চলে নতুন ছোট আকৃতির এক ধরনের জালের ফাঁদ। স্থানীয় ভাবে হাতে তৈরী এ ছোট জালের পরিচিতি বোডা জাল। বর্তমানে এর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এ বোডা জালের বাণিজ্যিক প্রসারতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জলাবদ্ধ কৃষি জমিতে সারি সারি বোডা জালের ফাঁদ দেখাগেছে। সারা মাঠজুড়ে ছোট আকৃতির চাই সদৃশ বোডা জালে এখানে সয়লাব। সাধারণত পানির প্রবাহ আছে এমন মাঠ ও নালায় এ বোডা জাল পেতে খুব সহজেই দেশী মাছ শিকার করা যায়। এ ফাঁদে দেশী প্রজাতির চিংড়ি মাছের পোনাসহ দেশী নানা প্রজাতির ছোট মাছের পোনা নিধন হয়ে থাকে।
উপকূলে বর্ষা মৌসুমে ইদানিং দেশী মাছ শিকারে বোডা জালের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মৎস্য বিভাগ কর্তৃক বাঁশের চাই ও বুচনা জালের ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হলেও দেশী মাছের নতুন ফাঁদ বোডা জালের ব্যবহার বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে উপকূলীয় এলাকায় মাছের নতুন ফাঁদ বোডা জালে এখন মাঠঘাট সয়লাব। কৃষিজমির জলাবদ্ধ মাঠে এ বোডা জাল পেতে দেশী প্রজাতির মাছের পোনা উজাড় করা হচ্ছে। জলাবদ্ধ মাঠে সারি সারি করে এ বোডা জাল পাতা হয়। এ জাল মাঠেই আবার গুছিয়ে রাখা যায়। দামে সস্তা ও ব্যবহার খুব সহজ বলে উপকূলে মাছের এ নতুন ফাঁদের চাহিদা বাড়ছেই।
উপকূলে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বোডা জালের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরের দক্ষিন বাজারে প্রতি সোম ও শুক্রবার এ বুচনা জালের হাট বসে। এ হাট হতে অনেক জাল ব্যবসায়ি পাইকারী বোডা জাল ও বুচনা জাল ক্রয় করে উপকূলীয় হাট বাজারে বিক্রয় করে। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক বুধবারের হাটে শহরের বালুর মাঠে বুচনা ও বোডা জালের পাইকারী ও খুচরা বাজার বসে। কাউখালী ও মঠবাড়িয়ার বুচনা জালের প্রতি সপ্তাহে কয়েক লাখ টাকার জাল কেনা বেচা হয়। মঠবাড়িয়ার ধানীসাফা, মাছুয়া ও তুষখালী বাজারেও সপ্তাহে বোডা জালের হাট বসে।
মঠবাড়িয়ার হাটের মাছ ধরার জাল বিক্রেতা মো. সোলায়মান মিয়া জানান, “বোডা জাল স্থানীয়ভাবে তৈরী। এ জালের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশের তৈরী চাইয়ের ব্যবহার কমছে।” বাঁশের সংকটে মাছের চাইয়ের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিকল্প বোডা জাল সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। নাইলন সূতার বোডা জাল দিয়ে মিঠাপানিতে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরা অতি সহজ ও দামে সাশ্রয়ী। বোডা জাল সহজে বহনযোগ্য ও মাঠে সারি করে পাতা যায়।
মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী চড়কগাছিয়া গ্রামের মাছ শিকারী মো. আব্দুল হক জানান, “জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ, শ্রাবণ ও ভাদ্র এ চার মাসে বোডা জাল দিয়ে মিঠা পানিতে দেশী মাছ ধরা হয়। এ জাল সম্প্রতি স্থানীয়ভাবে প্রচলন ঘটেছে। দামে সস্তা ও সহজে ব্যবহার করা যায়। ” প্রতিটি বোডা জাল ২৫ টাকা দরে বিক্রয় হয়। গ্রামের নি¤œ আয়ের মানুষজন বোডা জাল দিয়ে মাছ ধরে পুরো বর্ষা মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ৪০০/৫০০ টাকা আয় করেন।
এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “বোডা জাল, বুচনা জাল ও বাঁশের চাই দিয়ে মাছ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছের পোনা বিনষ্ট হয়। যা দেশের মিঠা পানির দেশীয় মৎস্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের মাছের ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে সকলকে সচেতন করতে মৎস্য বিভাগ হতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।”