দিনদিন কমে যাচ্ছে বসন্তের স্মারক শিমুল.. পলাশ
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥
ফুল নিয়ে বাঙালির মাতামাতি বেশ পুরনো। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, ভক্তিতে ফুল তুলনাহীন। ফুলের প্রতি প্রেম নেই-এমন মানুষ মেলা ভার। তেমনি পলাশ-শিমুল ফাগুনের ফুল-বসন্তের ফুল-ভালোবাসার ফুল। বাঙালির সংস্কৃতির আবাহনে হৃদয়কে সাজায় পলাশ-শিমুলের লাল আভা। ইতোমধ্যে পলাশ, শিমুলেরা পাপড়ি মেলে ধরেছে গাছে গাছে। এ ফুলের সৌন্দর্য্যে চারিপাশে যেন সুখকর উৎসবের রোমাঞ্চ বয়ে যায়। আম্র-মুকুলের মনকাড়া গন্ধে বসন্তের রঙ লেগেছে বেশ আগেই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বসন্তের স্মারক শিমুল, পলাশ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
কারণ হিসেবে বেসরকারী কৃষি ও প্রকিৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠান “বারসিক” এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় জানান, এটি ফলজ বৃক্ষ নয়, শুধু ফুলের সৌন্দর্য্য। এছাড়াও এই গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়া কোন কাজে আসে না বলে এই গাছ লাগাতে মানুষের এত অনীহা।
এ ফুল বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত মারফত জানা গেছে, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে শিমুল এসেছে এই বাংলায়। ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সিইবা। মালভেসি গোত্রভূক্ত শিমুল ১৮ রকম হারবাল ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
আর প্রকৃতি তার আপন লীলায় মত্ত হয়ে পত্রহীন গাছের নগ্ন ডালে উজ্জ্বল লাল বাগাড় কমলা রঙের পলাশ ফুটিয়ে মানুষের আদর ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে। বাংলার হাজার হাজার বৃক্ষরাজির মধ্যে পলাশ অন্যতম। রঙেভরা বসন্তে এই ফুলের বিশাল দখলদারিত্ব। পলাশ মাঝারি আকারের পত্রমোচী দেশীগাছ। তিনটি পত্র নিয়ে যৌগিকপত্র। ফুল ফোঁটে বসন্তে। ৭.৫ থেকে ১০ সে.মি. আয়তনের শিম ফুলের মতো।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নেত্রী লক্ষী চ্যাটার্জ্জী বলেন, ‘মূলত প্রকৃতির মিলন হয় বসন্ত ঋতুতেই। আর পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা।’ তিনি আক্ষেপের সুরে জানালেন, দিন দিন শিমুল-পলাশ গাছ উজাড় হওয়ায় প্রকৃতির রুপ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রকৃতি রাঙানো গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্বরোপ করা উচিত।
মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে গায়ের মেঠো পথের ধারে অযত্নে অবহেলায় শিমুল পলাশের কোলজুড়ে হেসে ওঠেছে রক্তিম ফুল। বর্তমানে অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে এই গাছগুলো। আগে গ্রাম গঞ্জের সবখানে এই ফুলের দেখা মিললেও এখন দেখা পাওয়া খুবই দুস্কর। আবহমান বাংলার প্রকৃতির রূপ ও দীর্ঘদিনের পাালিত সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পলাশ-শিমুল গাছ টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।