ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফসলের সুরক্ষা করে ‘ব্যাঙ’
মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে
‘ব্যাঙ’ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। আমাদের ক্ষেতের ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফসলের সুরক্ষা করে। ব্যাঙকে কৃষকের বন্ধু বলা হয়। তবে নানা কারণে দিন দিন উপকারি এ প্রাণিটি আমাদের দেশ থেকে বিপন্ন হতে চলেছে। ব্যাঙ পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে। পানিতে, মাটির গর্তে, গাছে আবার কিছু ব্যাঙ জঙ্গলে বাস করে।
বাংলা পিডিয়া থেকে জানা গেছে, ‘ব্যাঙ’ (Frog and Toad) Amphibia ) Anura শ্রেণির অহঁৎধ বর্গের একটি উভচর মেরুদন্ডী প্রাণি। পৃথিবীতে ব্যাঙের ২৮টি গোত্র এবং ৩৩৮টি গণের অধীনে প্রায় ৪,৩৬০টি প্রজাতি রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ফসলি জমি এবং ধানক্ষেতে প্রায় ১০ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোলা ব্যাঙ (দুই প্রজাতির), কুনোব্যাঙ, ঝি ঝি ব্যাঙ (৭ প্রজাতির) ও কটকটি ব্যাঙ। এসব ব্যাঙ ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফসলের উপকার করে।
জানা যায়, ব্যাঙের মলমূত্র বেশির ভাগই ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে ধানক্ষেতে ব্যাঙ থাকলে বাড়তি কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয় না। বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে পারেন কৃষক। উপকারি বন্ধু ব্যাঙের বিলুপ্তির প্রধান কারণ চর্ম রোগ। এছাড়া বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন, ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি কারণে ব্যাঙ বিলুপ্তি হতে চলেছে।
কাইট্রিডিওমাইকোসিস হচ্ছে ব্যাঙের এক ধরণের দুরারোগ্য চর্মরোগ যা কাইট্রিড (কুইট্রিড ফাঙ্গাস নামের একটি স্কিন ফাঙ্গাস) ছত্রাকের মাধ্যমে ছড়ায়। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবধারিত। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে উভয়চর প্রাণির বিলুপ্তির জন্য অন্যতম কারণ এ ছত্রাক। এক সময় দেশের গ্রামাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ দেখা যেত। ব্যাঙের ডাক যেন বর্ষার আগমনি বার্তা নিয়ে আসতো। এখন বাসস্থানের জায়গা হ্রাস পাওয়ায় এবং ছত্রাকজনিত বিশেষ ধরণের ভয়াবহ রোগের কারণে দিনে দিনে এদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম বারসিক নিউজকে বলেন, ‘ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ব্যাঙ ফসল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উপকারি এ প্রাণিটির বংশ বিস্তার লাভে জনসচেতনতার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করি।’