একজন যুব উদ্যোক্তার সমন্বিত কৃষি খামার
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
সাতক্ষীরা জেলোর শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কচুখালী গ্রামে সফল একজন যুব উদ্যোক্তা মনজুরুল ইসলাম (৩৫)। জীবন ছিলো ভবঘুরে বাপ মা ও ভায়ের সংসারে খেয়ে দেয়ে যা মন চায় তাই করা। কিন্তু একটা সময় এসে বুঝলেন যে ’কিছু একটা করতে হবে কত দিন আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবো’।
সে লক্ষ্যে কাজের সন্ধ্যানের এলাকার বাইরে ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাকটরিতে একবছর কাজ করেন। কিন্তু সেটা মনে হয় যেন অন্যের অধীনে কাজ করা খুবই কষ্টকর। তাই তিনি সেই কাজ ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন এবং বাবার যে জায়গা জমি আছে সেখানে স্বাধীনভাবে কিছুর করার চিন্তা সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৮ সালে বাবার দেওয়া ১.৫ বিঘা জমির চারিপাশে মাটি দিয়ে বাউন্ডারি দিলেন। বাউন্ডারি রাস্তার উপরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন এবং বিলের মধ্যে ধান সাথে ক্যানেল তৈরি করে মাছও চাষ শুরু করলেন। সেখান থেকে প্রতিবছর এই জমিতে ১২ মাস বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ করেন। তার ক্ষেতটি একটি সমন্বতি কৃষি খামার। যেখানে ধান, সবজি এবং স্থানীয় বিভিন্ন মাছ চাষ করেন।
এই প্রসঙ্গে মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যে উদ্যোগে নিয়েছি এখানে আমি যেমন কাজ করি তেমনি আরো দু’জন মানুষ কাজ করে। আমি চাই আমার ক্ষেত বাড়াতে এবং আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান করতে। বছরে ধান, সবজি ও মাছ চাষ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার উপর আয় হয়। আমার এ কাজ দেখে গ্রামের কয়েকজন এভাবে সমন্বতি কৃষি খামার তৈরি করেছেন। বর্তমানে আমার এ কাজ দেখতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজন এবং গ্রামের মানুষ আসেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ধান সবজির পাশাপশি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনরে ফলজ গাছ লাগিয়েছি। এছাড়াও আমার এখন ৩টি গরু, ১০টি ছাগল, ১৪টি হাঁস এবং ১৮টি মুরগি আছে। বাড়িতে প্রায় সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। বাজার থেকে শুধুমাত্র তেল, লবণ ও কিছু মসলা ক্রয় করতে হয়। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমার সংসারের অবস্থা পরিবর্তন হতে চলেছে।’
মনজুরুল ইসলাম জানান, তাঁর এ কাজের জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বারসিক যে শতবাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে তাঁর বাড়িটা নির্বাচরন করেছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা ও যোগাযোগ চলমান রেখেছে। এবছর জৈব পদ্ধতিতে ফসল চাষের জন্য তারা ভার্মি তৈরির প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা করেছে। একই সাথে আমন মৌসুমে বারসিক’র কাছ থেকে ৪ প্রকার স্থানীয় ধান নিয়েছেন। তার মধ্যে চিনিকানি ধানটা ৭ কাঠা জায়গায় লাগিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ধান ও সবজির বীজ সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতে তাঁর বাড়িটিকে একটি আদর্শ কৃষিবাড়ি হিসেবে গড়ে তুলতে চান।