লোকায়ত পদ্ধতিতে তালচারা তৈরি
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
বর্জ্রপাতসহ পরিবেশগতভাবে তাল বৃক্ষের নানা উপকারিতা আছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ুগত পরিবর্তনে সারা দেশেই বর্জ্রপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাল বৃক্ষকে বর্জ্রপাত নিরোধক বলা হয়। পাশাপাশি এটি মাটিক্ষয় রোধ করে এবং খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আরো অনেক উপকার করে এই তালবৃক্ষ। বাংলা ভাদ্র মাস থেকে তাল পরিপক্ক হয়। গ্রামাঞ্চলে এসময় তাল দিয়ে নানরকম খাবার বানানোর আয়োজন চলে। এসময় তালের প্রচুর বীজ পাওয়া যায়। গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়ির পাশেই এসময় তালের বীজগুলো স্তুপ করে রাখা হয়। একটা তাল থেকে সাধারণত তিনটি বীজ পাওয়া যায়। কখনও কখনও একটি বা ২টি বীজেরও তাল পাওয়া যায়।
বর্ষার পর স্তুপ করে রাখা তাল অংকুরোধগম হয় প্রাকৃতিকভাবেই। এই বীজের শ্বাস অনেকের প্রিয় খাবার। ঠিক এ ক্ষেত্রেই ভিন্ন চিন্তা করেছেন গোকুল-মোথুরা কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রের উদ্যোক্তা কৃষক জীতেন্দ্রনাথ সূত্রধর। সংরক্ষণ করে রাখা তালবীজগুলো তিনি লোকায়ত পদ্ধতি ব্যবহার করে চারা তৈরি করছেন। উদ্দেশ্য চলতি মৌসুমেই বীজগুলো পতিত জমি ও রাস্তার পাশে রোপণ করে দেওয়া। তিনি মৌসুমী সকল ফলের বীজ সংরক্ষণ করে নিজ উদ্যোগে পতিত জমি ও রাস্তার পাশে বপন করে দেন। কিন্তু দেখো গেছে তাল বীজগুলো রোপণ করে দিয়ে আসলে নানা কারণে বীজগুলো অংকুরোদগম হয় না; পরিশ্রমও বৃথা যায়।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জীতেন্দ্র সূত্রধর লোকায়ত পদ্ধতিতে তাল চারা তৈরির পরিকল্পনা করেন। এই পদ্ধতিতে, ঝুড়ঝুড়ে মাটির সাথে পঁচা গোবর সার বা ভার্মি কম্পোষ্ট মিশিয়ে মাটিগুলো স্তুপ করে রাখা হয় ২-৩ দিন। এরপর স্তুপ করে রাখা মাটিগুলো কোদাল দিয়ে ভেঙে দিয়ে ঝুরঝুড়ে মাটির মধ্য প্রয়োজনমত তাল বীজ স্থাপন করা হয় স্তর করে। এরপর মাটিগুলো পুনরায় স্তুপ করে রাখা হয়। স্তুপ করে রাখা মাটি ৫-৭দিন কোন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর কিছুদিন পর পর বীজগুলো অংকুরোধগম হতে থাকে। ১৫-২০ দিন পর বীজ থেকে একটি পাতা বের হয়। পাতাটি সবুজ হয়ে এলে তা তুলে রোপণের উপযোগি হয়। নরম মাটির মধ্য বীজটি শেকড় বিস্তার করে বলে শেকড় না ছিড়ে সহজেই বীজ, শেকড় ও গাছসহ তুলে অন্য জায়গায় রোপণ করা যায়। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক মাসের মতো সময় লাগে। অংকুরোদগম হয় শতভাগ। পাশাপাশি এভাবে তালচারা তৈরি করলে চারাগুলো মূল জায়গায় রোপণের পর দ্রুত বড় হয় এবং মরে যায় না।
এ বিষয়ে কৃষক জীতেন্দ্র নাথ সূত্রধর বলেন, “এমনি তালবীজ রাখলে শক্ত মাটির মধ্য শেকড় চলে যায়। পরে চারা তুলতে গেলে শেকড় ছিড়ে গিয়ে আর গাছ হয় না। আবার শুধু বীজ রোপণ করলে নানা কারণে বীজগুলো নষ্ট হয়ে যায়, পরিশ্রম বৃথা হয়ে যায়। আবার আমি এভাবে চারা তৈরি করি বলে আশেপাশের অনেক কৃষক-কৃষাণী এসে আমার বাড়ি থেকে তাল চারা নিয়ে যায়। এভাবে চারা তৈরি করে আমি নিয়মিত অন্য কৃষকদের বিনিময় করি এবং নিজ থেকেই পতিত জমি ও রাস্তার পাশে রোপণ করি।’