বিশ্ব খাদ্য দিবসে ‘ষাটোর্ধ্ব কৃষকদের জন্যে কৃষক পেনশন স্কিম চালুর দাবি
রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম
‘আমরা জমি চাষী ভাই
শহর বাসীর প্রাণ বাঁচাই
সবার চেয়ে অধিক মন
ভালো আমাদের কৃষকের মন।’
-জাতীয় পরিবেশ পদক প্রান্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা।
দেশের জন্যে কাজ করে সবাই তো পেনশন পায়, আমরা কৃষকরা কেন পেনশন পাবো না। আমরাই দেশের মানুষের জন্যে খাদ্য উৎপাদন করি, আমরাই দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। তাহলে আমাদের জন্য সরকার কেন পেনশন স্কিম চালু করছেনা, আমাদের মতো ষাটোর্ধ প্রবীণ কৃষকদের পেনশন স্কিন চালু চাই।’ কথাগুলো বলেছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্ল (৭০)। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে প্রবীণ কৃষকরাই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছেন। যৌবনকালে শ্রম দিয়েছি, প্রবীণকালে অভিজ্ঞতা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের মতো প্রবীণ কৃষকরাই আবার তাঁদের কর্মক্ষমতা হারানোর পর খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে জীবনের শেষ পর্যায়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছি।’
রাজশাহীর আরেক আদর্শ কৃষক ও রাষ্ট্রপতি জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত নুর মোহাম্মদ (৬০)বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টায় হাজার হাজার ধানের জাত সুরক্ষা হচ্ছে, নতুন নতুন ধান উদ্ভাবন করছি, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছি, কতো কষ্ট করে দেশের মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করি, দেশ গড়ার অবদান রাখছি, কিন্তু আমরা যখন প্রবীণ হয়ে যাচ্ছি, আমাদের জীবন অসহায় হয়ে যাচ্ছে, দেখার আর কেউ নেই। আমাদের জন্য সরকার পেনশন চালু করুক।’
গতকাল বিশ^ খাদ্য দিবস ২০২১ এর এক আলেচানা অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ‘যাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাঁরাই জীবনের শেষ প্রান্তে খাদ্য চিকিৎসা, বিনোদন, আবাসিক সংকটে পড়ে এক অনিশ্চিত জীবনযাপন করেন। বর্তমান দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় এই অংশ কৃষক সমাজের কর্মস্থান নিয়ে সরকারকে কখনো ভাবতে হয়নি।’ তারা আরও বলেন, ‘কৃষকরা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করেন। যারা এই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এই অবস্থায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ষাটোর্ধ কৃষকদের জন্য সরকারীভাবে পেনশন স্কীম চালু করা এখন সময়ের দাবি। যেমন বয়স্কভাতা, বিধাব ভাতা চালু করা হয়েছে তেমনি ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ কৃষকদের জন্যে পেনশন স্কিম চালু করে দেশের প্রবীণ কৃষকদের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখার দাবি জানাই।’
উল্লেখ্য যে, গতকাল বিশ^ খাদ্য দিবস উপলক্ষে বারসিক এবং বিভিন্ন জনসংগঠন, তরুণ সংগঠনের যৌথ আয়োজনে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং ষাটোর্ধ কৃষকদের প্রবীণ ভাতা বিষয়ক আলোচনা ও মতবিনিময় হয়। এ ছাড়াও গ্রামের জনসংগঠনগুলো তাদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং চাষ পদ্ধতি বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিডিনময় করেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার গুবিড় পাড়া ও মাহালী পাড়ায় নারী কৃষকদের আয়োজনে এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার উচির পুকুড় গ্রামে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ প্রবীণ কৃষকের পেনশন স্কিম চালুর দাবিতে কমিউনিটি পর্যায়ে মানববন্ধন করেন।
এদিকে রাজশাহী মহানগড়ে তরুণ সংগঠন সামাজিক কল্যাণ সংস্থা এবং বারসিকের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে – নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিপণন এবং ষাটোর্ধ কৃষকদের পেনশনের দাবিতে আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ, নাগরিক সমাজের সীমা খাতুন, সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালন স¤্রাট রায়হান, বারসিক অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও তরুণ প্রতিনিধিবৃন্দ।