তানোরে সম্ভাবনাময় দেশীয় মটর

তানোরে সম্ভাবনাময় দেশীয় মটর

তানোর, রাজশাহীর থেকে অমৃত সরকার:

রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামে বিগত চার পাঁচ বছর থেকে রবি বা বোরো মৌসুমে ধান ও আলুর পাশাপাশি রবি শস্যের চাষ শুরু হতে থাকে। ফসল চাষে পানির সমস্যা, রোগ-বালাই ও ফসলের চাষ খরচ বিবেচনা করে দুবইল গ্রামের কৃষকরা রবিশস্য তথা সরিষা, মসুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। আস্তে আস্তে সম্প্রসারণ হতে থাকে রবিশস্য চাষের জমি। কারণ রবিশস্য চাষে পানি কম প্রয়োজন ও চাষের খরচও অনেক কম। এরপর কৃষকরা নিজেরাই বিভিন্ন বাজার ও কৃষকের কাছ থেকে রবিশস্যও বীজ সংগ্রহ করে রবিশস্য চাষ করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে কিছু দেশীয় মটরের বীজ ও নিজের উদ্যোগে বীজ সংগ্রহ করে দুবইল গ্রামের কৃষক মো. গোলাম মোস্তফা নিজের ১১বিঘা জমিতে মটর বীজ বপন করেছেন।দেশি মটর -১

রবিশস্য চাষে উদ্যোগ গ্রহণ
দুবইল গ্রামে রবিশস্য চাষ শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। প্রথমবার কিছু কৃষক নিজের জমিতে মসুর চাষের মাধ্যমে গ্রামে রবিশস্য চাষের প্রচলন শুরু করেন। রবিশস্য চাষ খরচ কম, পানির প্রয়োজন কম ও লাভ ভালো হওয়ার কারণে প্রথম বারেই গ্রামের কৃষদের মাঝে ছড়িয়ে পরে মসুর চাষ। এরপর কৃষকদের মাধ্যমেই দুবইল সহ পাশের সাহপুর, কন্দপুর, ইলামদহ সহ বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পরে রবিশস্য চাষ। এ প্রসঙ্গে দুবইল গ্রামের কৃষক মো. লিয়াকত আলী (৪১) বলেন, “প্রথমবার বারসিক’র বীজ সহযোগিতায় আমি নিজের জমিতে মসুর চাষ করে সফলতা পাই। মূলত চাষ খরচ কম, পানি ও বাজার দর বিবেচনা করেই গ্রামের অন্য কৃষকরা মসুর চাষে উদ্যোগি হয়ে উঠে। আমি গত মৌসুমে ৭৫ কেজি বীজ বিক্রয় করি দুবইল ও সাহপুর গ্রামের কৃষকদের কাছে। কিন্তু এর পরেই এলাকায় রবিশস্য’র জাত বর্ধনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপর একজন কৃষক মো. মোস্তফা কামাল ‘বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক’ এ যোগাযোগ করেন দেশিয় জাতের মটরের চাষ বিষয়ে।” নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন মটর চাষের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে। যোগাযোগ করেন বীজ প্রাপ্তির বিষয়ে। বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে অল্প পরিমাণ বীজ পাওয়া যায়। যা দিয়ে ১১বিঘা জমিতে চাষ করা সম্ভব নয়। এরপর যোগাযোগ করেন নাচোল ও নাটোর এলাকার কৃষকদের সাথে। সেখান থেকে চাহিদা মত বীজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।দেশি মটর -২

নতুন ফসল হিসেবে দেশি মটর
নভেম্বর-১৭ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ প্রাপ্তির পর ১১বিঘা জমিতে ২টি করে চাষ দেওয়া হয়। প্রথম চাষের পর তানোর উপজেলার বহড়া গ্রাম থেকে ৫৫ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার সংগ্রহ করে জমিতে প্রয়োগ করে। বাকী একটি চাষ ও মই দিয়ে মটরের বীজগুলো বপন করে দেওয়া হয়। বীজ বপনের পর একটি মাত্র মই দিয়ে জমি সমান করে দেওয়া হয়। বীজ বপনের ১০দিন পর যখন চারা অঙ্কুরোদগম হয় তখন একটি মাত্র সেচ দিয়ে খুবই অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে মো. মোস্তফা কামাল (৪৫) বলেন, “মটরের বীজগুলো জমিতে বপনের পর আমি চিন্তায় ছিলাম বীজ অঙ্কুরোদগম বিষয়ে। তবে ৮০-৮৫ ভাগ হারে বীজগুলো অঙ্কুরোদগম হয়েছে।” মটর চাষের বিঘা প্রতি খরচ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বীজ, সার, ভার্মি কম্পোস্ট, চাষ ও সেচ খরচ বাবদ প্রতি বিঘাতে ২৫০০/- টাকা খরচ হয়েছে। সে হিসেবে তাঁর মোট ২৭৫০০/- টাকা খরচ হয়েছে ১১ বিঘা জমিতে। পাশাপাশি ফসল সংগ্রহের সময় বিঘা প্রতি খরচ হবে আরো ৫০০/- টাকা।দেশি মটর -৩

সম্ভাবনা
দুবইল গ্রামে দেশি মটর এবারই প্রথম চাষ হচ্ছে বলে গ্রামের সকল কৃষকের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে গোলাম মোস্থফার মটর চাষ। প্রতিদিনই নিজ গ্রাম সহ আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা দেখতে আসছেন মটর চাষ। আলোচনা করছেন মটর চাষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। মটরের ফলন বিষয়ে কথা বলেন মোস্তফা কামাল বলেন, “আমার নিজের অভিজ্ঞতা এবং যাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি তাঁদের সাথে আলোচনা করে আশা করছি বিঘা প্রতি ৭ মণ হারে ফলন আসবে।” বিঘা প্রতি যদি ৩০০০/- টাকা খরচ এর বিপরীতে ফলন হবে ৭মন। ফসলের উৎপাদনের সময় বাজার দর ৩হাজার টাকা হিসেবে ১বিঘা জমিতে থেকে পাওয়া যাবে একুশ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে একবিঘা জমিতে থেকে মটরের ভুষি বাদ দিয়ে আঠারো হাজার টাক নিট লাভ করা সম্ভব বলে মনে করছেন দুবইল গ্রামের কৃষকরা।

happy wheels 2

Comments