লেখাপড়া করে জীবন গড়বো
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
‘বর্তমানে পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির একটি বড় সমস্যা হচ্ছে কিশোরীদের বাল্যবিয়ে হয়ে যাওয়া’- কথাগুলো বলছিলেন ওই বস্তির শাপলা কিশোরী সংগঠনের সদস্য মমতাজ বেগম। কিছুনদিন হলো তাঁর বান্ধবীর বাবা মা তার বান্ধবীকে বাল্য বিয়ে দিয়ে দেয় ভালো পাত্র পেয়েছে এ কথা বলে।
সম্প্রতি পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির শাপলা কিশোরী সংগঠনের ১৮ জন কিশোরীর সাথে বারসিক এর পক্ষ থেকে গ্রীনভিউ বিদ্যানিকেতন স্কুল এ ’কিশোরীদের নেতৃত্ব উন্নয়ন, তথ্য অধিকার ও দূর্যোগ সক্ষমতা’ বিষয়ক এক আলোচনা সভা উপরোক্ত কথাটি তিনি বলেছেন। আলোচনা বারসিক’র পক্ষ থেকে প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহযোগী প্রকল্প সমন্বয়কারী ফেরদৌস আহমেদ এবং সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাল্যবিয়ে একটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। মেয়েদের ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছরের নিচে দেওয়া বিয়েকে বাল্যবিয়ে বলে। বাল্যবিয়ে যে দেয় এবং যারা করে আইনের চোখে দুজনই অপরাধী এবং দুজনারই জেল এবং জরিমানা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোন মেয়েকে অভিভাবকেরা জোর করে বাল্যবিয়ে দিতে চায় তবে ’৩৩৩’ এ ফোন দিলে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ চলে আসবে এবং বিয়ে বন্ধ করে দিবে। এই নাম্বারটিতে ফোন করতে কোন টাকাও খরচ হয় না।
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘জীবনে বড় হবার জন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। যত সমস্যাই আসুক না কেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে, উপার্জন করার স্বক্ষমতা তৈরি করতে হবে। একমাত্র লেখাপড়াই পারে জীবনকে সুন্দর করতে, সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে।’
সুদিপ্তা কর্মকার বলেন, ‘বাল্যবিয়ে কুফল দিকগুলো আগে নিজেকে ভালোমত বুঝতে হবে এবং সকলের কাছে তা তুলে ধরতে হবে। একটি সংগঠন হিসেবে সকলকে বোঝানো কাজটি করতে হবে। আশেপাশে বাল্যবিয়ে হলে তা রুখতে এগিয়ে আসতে হবে, বাবা মা এবং অভিভাবকদেরকে বোঝাতে হবে কম বয়সে বিয়ে দেয়া অন্যায়। নিজেকে স্বপথ নিতে হবে ‘আমি যেকোন পরিস্থিতিতেই পড়াশোনা চালিয়ে যাব’, নিজের ভবিষ্যৎ নিজেকেই পরিবর্তন করতে হবে।’
আলোচনা শেষে শাপলা কিশোরী সংগঠন এর সকলে মিলে শপথ করে, ’আমরা লেখাপড়া করবো ,জীবন গড়বো, বাল্যবিবাহ রুখবো’।
উল্লেখ্য, বাল্যবিয়ে সমাজের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। একটি বাল্যবিয়ের সাথে সাথে একজন কিশোরীর স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তার কৈশর নষ্ট হয়ে যায়। বাল্যবিয়ের ফলে একজন কিশোরীর শারীরিক নানা সমস্যা তৈরি হয়, সে নিজে অপুষ্টিতে ভোগে এবং সে অপুষ্টিজনিত সন্তান জন্ম দেয়। এছাড়াও মার্তৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যায়। যে সময় তার পড়াশোনা করে ভবিষ্যৎ গড়ার সময় সে সময়ে তাকে শশুরবাড়ির সংসার সামলাতে হয়। কিশোরী বয়সের একটি মেয়ে তার উপর হয়ে যাওয়া কোন অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে পদে পদে তার উপর স্বামী এবং শশুর শাশুরী কর্তৃক চলে নির্যাতন।