বাড়ি ভাড়া না থাকলে বের করে দেয় কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে কেউ দেখে না !

ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল

‘করোনা দুর্যোগ ও নগরে নি¤œ আয়ের মানুষদের খাদ্য সংকট’ শীর্ষক এক অনলাইন নাগরিক সংলাপ আজ (২২ আগস্ট, ২০২০) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) এবং বারসিক-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে আলোচনা করেন কাপ এর নির্বাহী পরিচালনক রেবেকা সান ইয়াত, বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বারসিক’র পরিচালক পাভেল পার্থ, সমাজসেবা কর্মকর্তা কেএম শহীদুজ্জামান, পবার সম্পাদক মেসবাহ সুমন, বস্তিবাসী নেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা প্রমুখ। সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বারসিক’র সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।

সংলাপে আবু নাসের খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘করোনায় এদেশে নি¤œ বিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এই তিন শ্রেণীকেই সংকটে ফেলেছে। সবার আগে দরকার সরকারের একটা ফ্রেকওয়ার্ক দাঁড় করানো যার মাধ্যমে এই মানুষদের পাশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের মধ্যে আন্তরিকতা থাকলেও কিছু অসাধু গোষ্ঠীর কারণে মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার।’ পাভেল পার্থ বলেন, ‘করোনা মহামারী মানুষ চোখে দেখতে না পারলেও তার প্রভাবটা খুব ভালো করেই চোখে দেখা যাচ্ছে। মানুষকে ভয়ংকর প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে করোনা।’ বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বস্তিবাসীদের বাড়ি ভাড়া না থাকলে বের করে দেয়া হয়েছে কিন্তু পেটে যাদের খাবার নাই তাদের খোঁজ কেউ নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, গ্রাম শহরের দরিদ্রদের মধ্যে দারিদ্রতা আরও বেড়েছে। অমর্ত্য সেনের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘খাদ্যের মজুদ থাকলেও তার যথাযথ বণ্টন ব্যবস্থা না থাকলে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যায় না। এক্ষেত্রে একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়।’
কাপের রেবেকা সান ইয়াত বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা চাঁদর বস্তিবাসীদের জন্য এই করোনাকালে কোন কাজেই আসেনি। সরকার বস্তিবাসীদের নাগরিকই মনে করেন না। সবার আগে দরকার বস্তিবাসীদের মানুষের মর্যাদা দিয়ে দেখা আর বণ্টন ব্যবস্থাটা ঠিক করা।

অন্যদিকে বস্তিবাসী নেত্রী রাফেজা বলেন, ‘করোনাকালে ঢাকার বস্তিবাসীরা সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছেন। লকডাউনের শুরুতেই তাদের কাজ থেকে বের করে দেয়া হয় কিন্তু তাদের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি একবারের জন্য ভাবেননি কেউ। বস্তিবাসীদেষর কাজ নাই, নিরাপত্তা নাই, খাদ্য নাই কিন্তু তাদেরও পেট আছে তাদেরও ক্ষুধা আছে। তাদের প্রতি সরকারের সদয় হওয়ার প্রয়োজন ছিলো।’

ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা শহর পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল একটি শহর। বেসরকারী তথ্যমতে, মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা ৪০ লাখের অধিক, যা ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪%। বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ২০১৫,; এর বাণীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন; আমাদের জাতীয় সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। এ কৌশলের প্রধান রূপকল্প হচ্ছে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত করা, বিশেষ করে দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত নাগরিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। করোনার এই থাবা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের লক্ষ্যমাত্রাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে প্রায় ১৯ শতাংশ হয়েছে। আর ২০২০ সালে শুধু করোনার কারণে আবার দারিদ্রের হার এসে দারিয়েছে ৪৩% এ। ২০২০ সালের আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে বারসিক’র ছোট স্টাডিতে দেখা গেছে করোনার কারণে এখন পর্যন্ত ৫০% ভাগ গ্রহকর্মী এখনও তাদের কাজ ফিরে পায়নি। যারা কাজ করছে তারা আগে তিনটি বা চারটি কাজ করলেও এখন করছে মাত্র একটি। ফলে শুধু গৃহকর্মীদের আয় কমেঠে ৬৬ ভাগ। যার প্রভাব পড়েছে তাদের খাদ্যাভ্যাসসহ অন্যান্য জীবনযাত্রায়।


পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইন্টিটিউট অব গবসেন্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তথ্য মতে, করোনাকালে পারিবারিক খরচ চালাতে না পেড়ে ঢাকাশহর ছেড়ে ১৫.৬৪ শতাংশ মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। অথচ করোনার আগে এই ঢাকা শহরের প্রতিদিন ১৪০০-১৬০০ মানুষ নতুন মানুষ এসে বসবাস শুরু করতেন। করোনার এই ক্রান্তিকালে ৩ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, রিকশা চালকদের আয় কমেছে ৫৩%, দরিদ্র মানুষের আয় কমেছে ৪৩%, গৃহকর্মীরা কাজ হারিয়েছে ৫৪% এবং নগরে সরকারের নগদ সহায়তা পেয়েছেন ১৬% মানুষ।

happy wheels 2

Comments