সাংগঠনিক একতাই আমাদের শক্তি
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
‘আমরা সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধৌত করি, দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে যাই না, গেলেও মাস্ক ব্যববহার করি, জনসমাগম এড়িয়ে চলি,বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখি, চারপাশে জীবানুনাশক স্প্রে করি, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার ও সবুজ শাকসবজি খাই, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে মানুষ কে সচেতন করি। ভয় ও আতংকিত না হয়ে আমরা করোনাকে জয় করতে চাই।’
সম্প্রতি সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় সংগঠনের উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্যালোচনা ও আগামি দিনে করণীয় বিষয়ক ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন বলধারা ইউনিয়নের সংগঠনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম।
সংগঠনের সভাপতি আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় বারসিক কর্মকতা শিমুল বিশ্বাসের স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র মন্ডল, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক সাহামুদ্দিন মিয়া, গোলাই কালিগঙ্গা কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগম, কাস্তা বারোওয়ারি কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সহভাপতি ভানু রায়, সংগঠনের নির্বাহি সদস্য আব্দুল হালিম মিয়া ও কোষাধক্ষ সুভাষ মন্ডল। আরো উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সদস্য মো. দারোগ আলী, ছকিল উদ্দিন, লিপিকা মন্ডল, সন্তোষ মন্ডল, আনন্দ মন্ডল, গোলাপি মন্ডল এবং বারসিক কর্মকর্তা শারমিন আক্তার প্রমুখ।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রতন মন্ডল বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস সব সময়ই কৃষকের পাশে আছে। বিশেষ করে কৃষক সংগঠনের সদস্যদের নিয়মিত যোগাযোগ আমাদের কাজকে আরো গতিশীল করে। যে কোন সময় আপনারা আমাদের ডাকবেন আপনাদের সহায়তা আমরা করবো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আপনাদের সংগঠনের ২০ জন সদস্যকে প্রণোদনার আওয়তায় যুক্ত করবো। তাছাড়া আপনারা কৃষির যে কোন দরকারে ইউনিয়ন কৃষি কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবো।’
বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বারসিক’র মাধ্যমে সংগঠন তৈরির সুফল, বৈচিত্র্যময় কৃষি কাজের উপর কৃষক কৃষক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, জৈব সার, জৈব বালাইনাশক তৈরি, বীজ সংরক্ষণ, উদ্যোক্তা তৈরি, নেতৃত্ব উন্নয়নসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পাই, যা থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে আমরা সদস্যরা নিজ নিজ গ্রামে সংগঠন গড়ে তুলি। কিন্তু এক সময় হয়তো বারসিক থাকবে না। তাই আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সাংগঠনিক একতা ধরে রাখতে হবে। সাংগঠনিক একতাই আমাদের শক্তি। সংগঠন করার সফলতা আমার পেয়েছি। সংগঠন করছি বলেই সরকারি ও বেসরকারি অফিস এর কর্মকর্তারা আমাদের চিনে। সাংগঠনিকভাবে আমরা পিছিয়ে পড়া মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে চাই।’
সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন সংগঠনে ৭টি গ্রামের মানুষ যুক্ত আছি। সাংগঠনিক ঐক্য ধরে রেখে যদি কোন ক্ষমতা কাঠামোতে সংগঠনের কোন সদস্যকে যুক্ত করতে পারি তাহলে জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
সুভাষ মন্ডল বলেন, ‘করোনা ও বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। করোনা প্রতিরোধে আমরা মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি সে বিষয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সরকারিভাবে ত্রাণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করে যাচ্ছি। সংগঠনের সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। করোনা ও বন্যায় খাদ্য সংকট নিরসণে সকল সদস্যদের পতিত জমি ব্যবহার, কৃষক কৃষক বীজ বিনিময়, বসতবাড়ীতে সবজি চাষ, পারিবারিকভাবে ওষুধি ও ফলজ বৃক্ষ রোপণ, বন্যা পরবর্তী ফসল চাষে মাটির হাড়িতে চারা তৈরি, বাড়ীর উঠানে বীজতলা নিজেরা তৈরি করছি এবং অন্য সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও প্রবীণ মানুষের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সবাইকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি।’
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রতন মন্ডল এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিপিকা মন্ডল বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে ও বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কৃষি কাজ আগের চেয়ে বেশি করে করতে চাই, দেশ ও মানুষের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই। সরকারি প্রণোদনার আওতায় যুক্ত করে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃষি অফিসের সহায়তা কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, বারসিক মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে যুব সংগঠন, কিশোরী সংগঠন, নারী সংগঠন, সাংষ্কৃতিক দল, প্রবীণ সংগঠন ছাড়াও গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটি গঠন করে চার ৪টি প্লাটফর্মে দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে।