হরিরামপুর দ্বীপচরে বন্যায় ভেসে গেছে যুব-কৃষকদের কলাবাগান: সহযোগিতার প্রত্যাশা
মানিকগঞ্জ, হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
বেকারত্বে অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিগত চার বছর যাবত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরাম উপজেলার দ্বীপচরের একদল যুব-কৃষক চরের অনাবাদি পতিত জমিতে প্রায় ৯০ বিঘাজুড়ে কলাচাষ শুরু করেছিলেন। বিগত বছরগুলোর ধার-দেনা ও ঋণ পরিশোধ করে তাদের লাভের স্বপ্ন এ বছরের দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। কারণ বন্যায় তাদের কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হরিরামপুর দ্বীপচরের আদিগন্ত বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে বিগত চার বছর কঠোর পরিশ্রম করে চরবাসী উদ্যমী যুব-কৃষকরা কলা চাষের মাধ্যমে সবুজের শ্যামলিমায় ভরে তুলেছিলেন। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচর, নটাখোলা, বালিয়াচক, হরিরহরদিয়া, গঙ্গাধরদি, সেলিমপুর ও জয়পুর গ্রামের প্রায় ৩০ একর (৯০ বিঘা) জমিতে তারা স্থানীয় জাতের সবরি কলা চাষ করেছিলেন। সাফল্যোর সিঁড়িতে পা রাখতে না রাখতেই এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত তাদের কলার বাগান।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/08/kola-1024x512.jpg)
এই প্রসঙ্গে নটাখোলা গ্রামের যুবক ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে মাষ্টার্স পাশ করে চাকরির পিছনে না দৌড়ে চরের যুবকদের সংগঠিত করে চরের পতিত জমিতে কলা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বাবা এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে নিজেদের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি সনকরালী (লিজ) নিয়ে কলাচাষ শুরু করি। বিগত ৩ বছরে ধার-দেনা পরিশোধ করেছি। চলতি বছর আমরা লাভের মুখ দেখব এমই প্রত্যাশা করছিলাম। ঠিক সেই সময় এ বছরের বন্যায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতির সন্মূখীন হতে হলো।’ ফয়সালের মত জুয়েল, আলমগীর হোসেন, রাসেল, শহিদুল মোখলেছুরসহ অনেক যুবক এখন দিশেহারা। দ্বীপচরের প্রায় শতবিঘা কলা ক্ষেত এখন বিরানভুমি।
চরাঞ্চলের মানুষ বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষ দিন-মজুরি আর কৃষির কাজের উপর নির্ভরশীল। কলা চাষের মাধ্যমে দিন মজুর, নৌকার মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছিল। একই স্বপ্ন ছিল যুব-কৃষকদের মনেও। এভাবে চরে কলাচাষ প্রসার লাভ করেছিল। চরের প্রতিটি বাড়িতে কলা চাষাবাদ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখছিল। বাড়িতে বাড়িতে ছোট ছোট কলার বাগান গড়ার যুব-কৃষকদের এই উদ্যোগ বন্যায় সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/08/kola1-1.jpg)
বন্যা চরের জন্য একটি নিয়মিত বিষয়, যা চরের কৃষি ও জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এ বছরের বৃষ্টি ও বন্যা বিগত ৮ বছরের মধ্যে চরে সংঘটিত হয়নি। বিগত বছরগুলোতে বন্যা না হওয়ার কারণে কলাচাষাবাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এবারের হঠাৎ বন্যা ও বৃষ্টির কারণে চরের আউশ-আমন ধান, পাট চাষাবাদও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হরিরামপুর চরের যুব-কৃষকরা আবারও কলা চাষ করার জন্য সহজশর্তে সরকারি ঋণ সুবিধা কামনা করেন। এই সুবিধাটুকু পেলে তারা দ্বীপচরের হাজার হাজার অনাবাদী-অর্ধপতিত জমি কলা চাষের মাধ্যমে ভরিয়ে তুলতে চান। এভাবেই তারা নিজের কর্মসংস্থান ও দেশের পুষ্টি পূরণে ইতিবাচক ভূমিকার রাখতে চান। এটাই এখন দ্বীপচরের যুব-কৃষকদের একমাত্র প্রত্যাশা।