দেশি কলার টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম নদীকান্দা। নদীর পাশ দিয়ে বসতি গড়ে ওঠায় গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে নদীকান্দা। এখানে ১৮০টি পরিবার বসবাস করে। বারসিক ২০২১ সাল থেকে এ গ্রামে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০২৩ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় “নদীকান্দা নারী উন্নয়ন সংগঠন”।
গ্রামের জনগোষ্ঠীর চাহিদার ভিত্তিতে গত ৩ জুন ২০২৪ তারিখে নদীকান্দা গ্রামের কৃষাণী মুসলেমা বেগমের মডেল শতবাড়িতে জাত বৈচিত্র্য গবেষণার অংশ হিসেবে দেশি ১০ জাতের কলার চারা রোপণ করা হয়। এসব চারা কর্মএলাকার স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুসলেমা বেগমের বাড়ির পাশে প্লট আকারে গাছগুলো রোপণ করা হয়।
রোপিত কলার জাতগুলো হলো: চিনি চম্পা, বিচা কলা,মানিক কলা, জিন কলা, সবরি কলা, সবুজ আনাজি কলা, সাদা আনাজি কলা, জেড কলা, কাঁঠালি কলা এবং অনচিনি কলা।
গবেষণা প্লটের গাছগুলো সুস্থভাবে বেড়ে উঠেছে এবং এর মধ্যে চারটি জাতের কলা গাছে তেউড় বের হয়েছে। প্লটটি দেখতে এলাকার অনেক মানুষ আসছেন এবং অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
নদীকান্দার কৃষক রহিম আলী (৩৮) বলেন, “আমাদের এলাকায় এত ধরনের কলার জাত নেই। এখানে থেকে তেউড় সংগ্রহ করে বাড়িতে লাগাবো। এতে কলার বৈচিত্র্য বাড়বে।” প্রবীণ কৃষক শামসুদ্দিন (৫৮) বলেন, “আমাদের সময়ে আমরা বিভিন্ন রকমের কলা দেখেছি, যা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে জাতগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব।”
এছাড়া কলার পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিচা কলা মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলের ওষুধি খাদ্য হিসেবে কার্যকর। আনাজি কলা কাঁচা রান্না করে বা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। কলার মুচা ও বিতরের কানজেল রান্না করে খাওয়া যায়। অনচিনি কলা ছোট বাচ্চাদের জন্য খুবই উপযোগী।
কৃষাণী মুসলেমা বেগম বারসিককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এ ধরনের গবেষণামূলক কার্যক্রম আমার মডেল শতবাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় আমি গর্বিত। এখান থেকে আমরা এলাকার উপযোগী জাতগুলো সংরক্ষণ করে সম্প্রসারণ করতে পারব। এই গবেষণার মাধ্যমে আমাদের এলাকায় দেশি কলার জাত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।”
কলার জাত বৈচিত্র্য গবেষণার মাধ্যমে নদীকান্দা গ্রামের মতো স্থানীয় এলাকায় দেশি জাতগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ উদ্যোগ জাতীয় কৃষি ও পুষ্টি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।