আপনজ্বালা উদ্ভিদ সংকটকালীন সময়ে খাদ্য ও পুষ্টি’র অফুরান ভাণ্ডার
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা:
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা পদ্মা নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিতে এলাকার মাঠ-ঘাট প্লাবিত হয়ে মৌসুমী বন্যায় রূপ নেয়। এসময় কৃষকের বিকল্প চাষাবাদ কৌশল বন্যা মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এসময় তারা বন্যা মোকাবেলায় উঁচু ভিটায় শাক-সবজি চাষ করে থাকে। এছাড়া বস্তায় মাটি দিয়ে মাঁচার উপর চারা তৈরি করে সবজি (পুই শাক, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা) চাষ করেন। বন্যায় এ পদ্ধতিতে (বস্তায় বা টবে) চাষাবাদ কম হওয়ায় শাক-সবজির ঘাটতিও দেখা দেয়। ফলে মানুষের শাক সবজির চাহিদা পুরনে বন্যা পরবর্তীতে আপন জ্বালা (আচাষকৃত) খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বন্যা পরবর্তীতে এলাকার যে আপন জ্বালা খাদ্য সহজে পাওয়া যায় তা হলো কলমি শাক ও শাপলা। এই আপনজ্বালা উদ্ভিদ দূর্যোগ মোকাবেলায় তাদের পাশে থাকে।
এই এলাকার নিচু জমিগুলোতে বর্ষার সময় কলমি শাক এবং শাপলা গভীর পানিতে জন্মায়। আর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বাজারেও এ শাক দেখা যায়। গ্রামের নারীদের দেখা যায় পড়ন্ত বিকালে কলমির শাক তুলতে। শাপলা বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাসতে দেখা যায়। এলাকার নিচু চক (মাঠ) কর্মকারন্দি, আন্ধারমানিক চক, পিপুলিয়ার চক, ভাতচালা বিল, দিয়ার বিল, গোপিনাথপুর বিলে সাদা শাপলা ফুলের অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখা যায়। এসকল চক ও বিল থেকে কলমি শাক ও শাপলার ডাটা তুলে বন্যার সময় খাবারে শাক-সবজির চাহিদা মিটিয়ে থাকে স্থানীয় কৃষকরা। পাশাপাশি, বাজারে বিক্রয় করে কিছু টাকা উপার্জন। উঁচু জায়গায় বা রাস্তার পাশে হয়ে থাকা কচু (কালো কচু ও আদারা কচু) বন্যা পরবর্তীতে শাক-সবজি হিসাবে খাবারের সহায়ক হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর লেছড়াগঞ্জ চরের জমিতে কালো কচু দেখা যায়। কালো কচু খাবারে মুখে চুলকায়না ও খাবারের স্বাদও বেশি। এভাবে আপনজ্বালা উদ্ভিদ প্রাকৃতিক দূর্যোগে পুষ্টি চাহিদা পুরণে সহায়ক হয়।
হরিরামপুরের কর্মকারকান্দি গ্রামের কৃষাণী সূর্য্য বেগম (৩৮) বলেন, “ নিচু এলাকার কারণে আমাদের এলাকায় প্রতি বছরই বর্ষায় বন্যা হয়। বন্যার সময় চকের কৃষি ফসল ও বাড়িতে শাক-সবজি সব নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার সময় শাক-সবজি না থাকায় খাবারে খুবই কষ্ট হয়। বন্যার সময় কলমি শাক ও শাপলা ডাটা খাদ্য হিসাবে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে। তবে আমি বন্যার সময় ও বন্যার পরে কলমি শাক ও শাপলা ডাটা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয় করে থাকি। ফলে আমার সংসারও ভাল চলে।”
দাসকান্দি গ্রামের কৃষক সুবুধ সরকার (৪৬) বলেন, “আমি লেছড়াগঞ্জ বাজারে কলমি শাক ও শাপলা ডাটা বিক্রয় করে প্রতি দিন প্রায় ২০০ টাকা আয় করতে পারি। বন্যার সময় ও পরের ৩মাসে (আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর) শাপলা ডাটা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। কলমি শাকে পুষ্টিগুন বেশি, সার বিষ নাই, খাইতেও ভাল। বন্যায় আমাদের এলাকায় যখন শাক-সবজি কিছুই নাই, তখন কলমি শাক ও সাপলার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।”
আমাদের দেশের চকে, বিলে আপনজ্বালা খাদ্য উদ্ভিদ যেমনি দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক তেমনি পুষ্টি চাহিদাও মিটায়। আমাদের সকলের উচিত আপনজ্বালা খাদ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণে ভুমিকা রেখে, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করা।