শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্কুল পর্যায়ে অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদের মেলা অনুষ্ঠিত
নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা
নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়নের দেওপুর উচ্চ বিদ্যালয়’র শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এবং বারসিক এর সহযোগিতায় গতকাল (১৯ সেপ্টেম্বর) এক অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় দেওপুর উচ্চ বিদ্যালয়’র ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ২০ জন শিক্ষার্থী (ছাত্রী-১০ জন) ২০টি স্টলে সর্বনিম্ন ১৮টি এবং সর্বোচ্চ ৬৬টি অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদের প্রদর্শনী করে। মেলায় তিনটি ক্লাশের ৭৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
সকাল ১১টায় প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুল হাসান খান মেলার উদ্বোধন করেন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদের ২০টি প্রদর্শন করে। তারা স্টল প্রদর্শনকারী শিক্ষার্থীদের নিকট অজানা উদ্ভিদগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। বারসিক’র কর্মী শংকর ম্রং মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানান।
মেলায় স্টলে শ্রেণীভিত্তিক (৮ম, ৯ম ও ১০ম) সর্বোচ্চ খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ প্রদর্শনকারী ৯ জন শিক্ষার্থীকে (প্রতিটি ক্লাশের ৩ জন করে) পুরষ্কৃত করা হয়। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পলাশ ৬৬টি অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদের প্রদর্শন করে প্রথম স্থান, আকলিমা আক্তার ৩৭টি এবং মিমি আক্তার ৩৬টি জাত প্রদর্শন করে যথাক্রম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে। শিক্ষার্থী ইমা অক্তার ৩৭টি, জান্নাতুল আক্তার ৩৪টি এবং হৃদয় ৩০টি জাত প্রদর্শণ করে অষ্টম শ্রেণী পর্যায়ে যথাক্রম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। দশম শ্রেণী পর্যায়ে শিক্ষার্থী জসিম আহম্মদ ৩৫টি, রুহুল আমিন ৩৫টি ও আবু নাইম ৩০টি জাতের খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ প্রদর্শন করে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আদিজা আক্তার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘মেলার মাধ্যমে আমি যেসব উদ্ভিদ সম্পর্কে জানি না, সেগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মেলায় স্টল দেয়ার জন্য তিনদিন আগে থেকে আমার মা-বাবা, দাদা-দাদী ও প্রতিবেশিদের নিকট থেকে অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদগুলেঅ সম্পর্কে জেনেছি। আমি এই মেলায় অংশগ্রহণ করে অনেক উপকৃত হয়েছি।” দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু নাইম বলেন, “আমি আমার মা-বাবা ও প্রবীণ প্রতিবেশিদের কাছে যেসব খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদগুলো চিনি না এবং কখনো খাইনি সেগুলো সম্পর্কে জেনেছি। বারসিক’র শংকর দা’র নিকট থেবে ডুমুর গাছের ফল ও তিত বেগুন যে খাওয়া যায় সেসম্পর্কে জেনেছি এবং নিজে খেয়েছি। এসব অচাষকৃত ফল, সবজি ও ঔষধি উদ্ভিদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি এই মেলার ফলে। আমি এখন থেকে বাড়ির চারপাশে জম্মানো খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ নিজের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করবো।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুল হাসান খান পুরষ্কার বিতরণী পর্বে শিক্ষার্থীদের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা ৬৬টি অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ সম্পর্কে জানে, আমি নিজেও এতগুলোর নাম জানি না এটি জেনে আমার খুব ভাল লাগছে।” তিনি সকল অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেরকে এসব উদ্ভিদ নিজেদের প্রয়োজনে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি মেলায় স্টল প্রদর্শন করে বিজয়ী ৯ জন শিক্ষার্থীদেরকে উপন্যাস বই দিয়ে পুরস্কৃত করেন।