উন্নয়নের সাথে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা আবশ্যক
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
বিশ্ব যত উন্নতির দিকে যাচ্ছে মহাবিশে^র স্বাভাবিক অবস্থার অবনতির গতি ততোটাই তরান্বিত হচ্ছে। এটা সর্বস্তরের বিশ্লেষকের মন্তব্য। তাই উন্নয়ন যতটা জরুরি, ততোটাই জরুরি পরিবেশের রক্ষা করার। এ ধারণা থেকেই মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার শহীদ রফিক যুব সেচ্ছাসেবক টিমের উদ্যোগে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। ‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রাই পারে সমাজকে বদলে দিতে’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ২৫ আগস্ট বারসিক সিংগাইর রিসোর্স সেন্টার প্রশিক্ষণ কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ যুব কর্মশালা। কর্মশালায় যুব সেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য ছাড়াও বারসিক মানিকগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটি পরিচালনায় সহায়কের ভূমিকা পালন করেন বারসিক’র সহযোগি সমন্বয়কারী বাহাউদ্দিন বাহার।
জলবায়ু পরিবর্তন-ঝুঁকি নিরসন ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে যুব সমাজ শীর্ষক কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবক এবং ঝুকি নিরসনে করণীয় বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। সেখানে বলা হয়, বিশে^র ধনী দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকান্ড জলবায়ু পবির্তনের গতিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করলেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশে^র সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কারণ বিপুল জনসংখ্যার দেশ-বাংলাদেশ। কোন ধরনের বিপর্যয় আসলে এ বিপুল জনসংখ্যার দেশটি কোনভাবেই সামাল দিতে পারবে না। আবার ছোট বড় বড় মিলে প্রায় সাতশত নদী দেশটির মধ্যে প্রবাহিত। উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতে জমে থাকা বরফ গলনের মাত্রা যদি বেড়ে যায় অথবা অধিক বৃষ্টিপাত হয় তাহলে আমাদের নদীগুলো তার চাপ সহ্য করতে পারবে না। অন্যদিকে বলা যায়, বিশ^ উষ্ণায়নের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে মেরু অঞ্চলের জমে থাকা বরফ গলে সুমুদ্রের উচ্ছতা বাড়িয়ে দিলে আমাদের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অর্থনৈতিকভাবে ততোটা স্বচ্ছল নয় যে, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া অঞ্চলের জনসংখ্যাকে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে পারবে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম হলেও মানুষের কর্মকান্ড পরিবর্তনের গতিকে বাড়িয়ে তুলছে বলে উল্লেখ করা হয় কর্মশালায়। বলা হয়, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার, কারণে অকারণে বৃক্ষ নিধন, মাত্রারিক্ত কার্বন নিঃসরনের মত উন্নয়ন উদ্যোগ মূলত এর জন্য দায়ী।
তাহলে আমাদের করণীয় কি? এ প্রশ্ন থেকেই উঠে আসে আমাদের দায় ও দায়িত্বের বিষয়টি। অর্থাৎ আমাদের কর্মকান্ড, চিন্তা চেতনায় বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। জাগ্রত করতে হবে আমাদের বোধ সত্তাকে। তা হতে পারে জন্মদিন পালনে মোমবাতির বদলে দশটি করে গাছ লাগিয়ে, হতে পারে পোশাকের বৈচিত্র্যতা কমিয়ে আবার হতে পারে পরিবেশ বাঁচাতে খাদ্যাভ্যাসে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া। অন্যেিদক বিকল্প কাজ বা পথ নির্ধারণে জামালপুরের তৌহিদুল ইসলাম তাপসের ময়লা আবর্জনাকে নিজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জ্বালানি শক্তি তৈরি ও গাইবান্ধার হাসান ইমামের সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে সেচ পরিচালনা করে পরিবেশ রক্ষার ভূমিকাও উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যেতে পারে।
মূলতঃ কর্মশালার মধ্যদিয়ে একটা বিষয় পরিস্কারভাবে উঠে আসে যে জলবায়ু পরিবর্তনের লাগামহীন গতির রাস টানতে আমাদের সর্বস্তরের মানুষের রিডিউজ, রি-ইউজ এবং রিসাইকেলিং পন্থা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে আমরা যে উন্নয়নের সাগরে ভাসছি তা অতল গহবরে তলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। এ উপলব্ধি থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসন ও স্থািয়ত্বশীল উন্নয়নে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবক টিমের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ গ্রাম ও স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ক্যাম্পেইন করার মত একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করেন।