সাম্প্রতিক পোস্ট

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে গ্রামীণ নারী

রাজশাহী থেকে অমিত সরকার 

১৫ অক্টোবর শনিবার ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নারীর বহুমাত্রিক ঝুঁকি, এখনই প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজশাহী জেলার পবা ও তানোর উপজেলায় ভুগরইল গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (পবা) এবং মাহালীপাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠন (তানোর) এর উদ্যোগে ও বারসিকের সহযোগিতায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। 

পবা উপজেলায় আদিবাসীদের সমন্বয়ে ভুগরইল সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন এর উদ্যাগে গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে  জলবায়ু পরিবর্তনে আদিবাসী খাদ্য সংকট বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করেন।

Exif_JPEG_420

উক্ত সভায় সংগঠনের সদস্য মারয়া বিশ্বাস (৫০) বলেন, ‘আমাদের  আগে বাজার থেকে তরিতরকারি কিনে খেতে হতো না বাড়ির আসে পাশে ফসলের জমিতে জঙ্গল থেকে খাবার সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তন ফসল চাষাবাদের পদ্ধতি পরিবর্তন ও বন জঙ্গল কেটে চাষাবাদ যোগ্য জমি করায় এখন আর খাবার পাওয়া যায় না। বাজার থেকে কিনতে হয় সব কিছু।  আমাদের আদি খাবারগুলো হারিয়ে গেছে। অচাষকৃত শাকসবজি গুলো এখন আর পাওয়া যায়না।‘ প্রাকৃতিক অচাষকৃত খাদ্যে সমূহ রক্ষার উদ্যাগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান মারিয়া বিশ্বাস।  সংগঠনের আরেক সদস্য কারোলিনা বিশ্বাস বলেন, ‘আগের থেকে সূর্যের তাপ বেরে গেছে এখন সময় মতন বৃষ্টি হয়না অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও গরমের জন্য আমরা বাইরের কাজ আগের মতন করতে পারছিনা। দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম আর রাতে ঠান্ডা পড়ার কারণে জ্বর ঠান্ডা কাশির মতন রোগ হচ্ছে। আমরা আর আগের মতন পরিশ্রম করতে পারছি না।’ 

অন্যদিকে তানোর উপজেলার মাহালীপাড়ায় নারী দিবস উপলক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি এড়াতে গ্রামীণ নারীদের ভূমিকা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মাহালীপাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, খরা,ও পানি শুন্যতাসহ নানা প্রাকৃতিক সংকটে ফসল চাষাবাদ সহ শাকসবজি উৎপাদন ঝুকিপূর্ণ হচ্ছে। এর পরও নারীরা নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অবদান রাখছেন। অনেকেই হাতের কাজ করে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করে চলেছেন। উক্ত অনুষ্ঠানে এলাকার এমন উদ্যোগী ১০ সংগ্রামী নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানা ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে বিশ্বজুড়ে। গ্রামীণ নারীর বহুমাত্রিক ভূমিকা ও অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য আন্দোলন চলছে যুগ যুগ ধরে। তবে এর মাঝে একটু একটু করে উন্নতি করছেন অনেকেই। সমাজের অগ্রগতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান অনস্বীকার্য।

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী; আর তার শতকরা ৮৬ ভাগের বাস গ্রামে। দেশে প্রায় দুই কোটি কর্মজীবী নারীর মাঝে দেড় কোটিই গ্রামীণ নারী। নারীরা সাধারণত সবসময় পরিবারের আয়ের দিকে ঝুঁকে থাকে। তারা সংসারমুখী হয়ে বিভিন্ন কাজকর্মে জড়িত হয়। কুটিরশিল্প, ছোটখাটো ব্যবসা বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হওয়া আগের তুলনায় কিছুটা কমে এলেও কৃষিখাতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলক বেশি। বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে ফসল উত্পাদন, শস্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রয়েছে নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। বাংলাদেশ যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এতে আমাদের গ্রামীণ নারীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু কৃষক হিসেবে না পরিবার থেকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, না সরকারিভাবে স্বীকৃতি মিলছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সব থেকে বেশি গ্রামীণ নারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা তাদের নিজেদের যে সার বিষ মুক্ত অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ অচাষকৃত খাদ্যের সোর্স তা হারিয়ে ফেলছেন আবার অতিবৃষ্টি অসময়ে বৃষ্টি ক্ষরা তাপমাত্রাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।  পাশাপাশি এখন এই প্রকৃতির খামখেয়ালিপোনার জন্য গ্রামীণ নারীদের পেশার পরিবর্তন ঘটছে অনেক নারীরা কাজ হারাচ্ছেন।

happy wheels 2

Comments