বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী দেবলা রানীর প্রচেষ্টা

শ্যামনগর থেকে মনিকা পাইক
বাড়ির আঙিনায় একপাশে মাটি, ইটের খোয়া, শুকনো গোবর, ছাই, ভর্তি বড় বড় বস্তা বা ব্যাগ, ড্রাম দাড় করিয়ে রাখা। এক একটা বস্তা বা ব্যাগ এক একটা সবজির ক্ষেত। এসব ক্ষেতে বেগুন, ঝাল, মিষ্টিকুমড়া, আদা লাগিয়েছেন দেবলা রানী। এই সবজি ক্ষেত থেকে রান্না ঘরের চাহিদা মেটে দেবলা রানীর।


দেবলার পুরো নাম দেবলা রানী সরদার। তিান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার বুৃড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদচন্ডীপুর গ্রামের একজন কৃষাণী (৫০)। তার স্বামী পরিমল সরদার (৬২)। পেশায় দিনমজুর। এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে পড়াশুনা শেষ করে বাইরে চাকুরী করে। আর মেয়েটা বিয়ের সূত্রে শ^শুর বাড়িতে। এখন তারা দুজন দুজনের সম্বল।


দেবলার সাথে আলাপে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার কারণে তেমন কোন ফসল হয় না। ২০০৯ সালে প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবের পর এ অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাব অনেক বেড়েছে। আইলা পরবর্তীতে যখন সবজি বা ফসল চাষে তারা ব্যাপকভাবে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে তখন থেকে দেবলা রানী স্বল্প পরিসরে প্রাথমিকভাবে ব্যাগে সবজি চাষ করেন।


তিন জানান, প্রথমে আমি কয়েকটি ব্যাগে চারা ফুটিয়েছিলাম। সেই চারা বড় হলে বস্তা ও ব্যাগে ভাগ করে রোপণ করি। বস্তা পদ্ধতিতে জায়গা কম লাগে, পানি ও কম লাগে, রোগ বালাইয়েরও যন্ত্রণা নেই। নিত্য প্রয়োজন মেটানো যায়। একই সাথে পাবিরাবিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। দেবলা রানী বলেন, ‘আমি এখন ১০টা বস্তা ও ড্রামে আদা, বেগুন,ঝাল চাষ করছি। প্রতিটি পাত্রে মাটি, জৈবসার, মুরগির বিষ্ঠা, সঙ্গে পর্যাপ্ত পানিও দেন। এরপর সবজির বীজ বা চারা লাগিয়ে ২-৩ দিন পর পর পানি দেন। এভাবে কিছুদিন গেলে সবজি খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠে।
এভাবে সবজি চাষের ধারণা কোথায় পেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন এক এনজিও কর্মী তার বাড়িতে এসে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমার আগের থেকে ইচ্ছে ছিল আমি এভাবে সবজি চাষ করবো। একপর্যায়ে শুরু করলাম, কিন্তু ভয় ছিল কতটুকু পারবো। এখন সে ভয় কেটে গেছে। আমার এখনো ১০টা ব্যাগ কেনা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে চাষের পরিধি আরো বাড়াবো। আমি বস্তায় সবজি চাষের পাশাপাশি একটি পুকুরসহ ৯ কাঠা জায়গা আছে সেখানে অন্যন্য সবজি লাগায়। বস্তায় সবজি চাষে সারাবছর শাকসবজি তোলা যায়।’


তিনি জানান, পদ্ধতিটি ছোটখাটো পরিবারের জন্য খুবই সুবিধাজনক। আমার আশেপাশে অনেকেই বাড়ির অনাবাদী জায়গায়, উঠানে শাকসবজি চাষ করে তারা আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকে। আমি তাদের চারা, বীজ সহযোগিতা করে থাকি। এভাবে আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়ে আমাদের পরিবারগুলো নিরাপদ সবজি চাহিদা মেটাতে পারছে আবার দেশীয় সবজী বীজ সংরক্ষণ করে জাতগুলো টিকে থাকছে।

happy wheels 2

Comments