সালমা বেগমের উদ্যোগ

সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ কুমার ঘোষ
পারিবারিকভাবে একটু ভালো থাকার লক্ষ্যে পুরুষের পাশা পাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভূমিকা রাখছে নারীরা। পারিবারিক স্বচ্ছলতার লক্ষ্যে সালমা খাতুন স্বামীর সাথে মিলেমিশে সংগ্রাম করে চলেছে। নিজের বাড়িতে সিট কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে সেলাই মেশিনে কাজ করে আয়ের মুখ দেখেছেন তিনি। “সেলাই মেশিনে কাজ ও সিট কপড়ের ব্যবসা করে আগের থেকে ভালো আছি। সেলাই মেশিনে কাজ করি কাজের সাথে সিট কাপড় কম বেশি বিক্রয় করি। মাসে দুই তিনবার নঁওয়াবেকি ও নাজিমগঞ্জ বাজার থেকে সিট কাপড় আনি বিক্রয় করি।’ এমনটাই বলছিলেন সালমা খাতুন।”


সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ডুমুরিয়া গ্রামের সালমা খাতুন (২৬)। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ের পর এসএসসি পাশ করে আর পড়া হয়নি কিন্তু স্বপ্ন ছিলো অনেক পড়াশুনা করার। সালমা খাতুনের পারিবারে সদস্য পাঁচ জন। পারিবারিক অচ্ছলতার কারণে স্বামী রবিউল ইসলাম (৩৩) এর পড়াশুনা করা হয়নি। তাদের বড় ছেলে সাকিবুর ইসলাম (১১) ক্লাস ফাইভে পড়ে। ছোট ছেলে সাহরিয়ার সাইন (১১ মাস)। শাশুড়ি জেসমিন নেছা (৬০) স্কুলে পা দেয়নি। সালমা খাতুনের স্বামীর নিজেস্ব কোন জায়গা নাই। শ^শুরের ভিটায় বসবাস করছে তারা।


২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটর্জ পাটনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টির সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে ডুমুরিয়া গ্রামের নীলকোমল সিএসও দলে যুক্ত হয় সালমা খাতুন। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় মূল সম্পদ হিসিবে নৌকা নিলে পরিবারের ইনকাম বাড়বে উল্লেখ করেন তিনি। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সহায়তা হিসাবে একটি নৌকা দুইটি গাছের চারা ও সাত প্রকারের সবজি বীজ ও চারটি হাঁস সহযোগিতা পান তিনি।


নৌকাটি সহযোগিতা পাওয়ার পরে তাদের দৈনিক আয় বেড়ে যায়। সুন্দরবনের নদীতে মাছ কাঁকড়া আহরণ করে ভালোভাবে সংসার চলছে একই সাথে সঞ্চয় ও বাড়তে থাকে। নিজের পারিবারিক খরচ এবং ছেলের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে সঞ্চয় বাড়াতে থাকেন সালমা। তাদের সঞ্চয় জমার আট হাজার টাকা দিয়ে তিনি নাজিমগঞ্জ বাজার থেকে সীটকাপড় ক্রয় করে বাড়িতে ব্যবসা শুরু করে। মাঝে মাঝে সুন্দরবনের পাশ বন্ধ থাকলে স্বামীর আয় বন্ধ থাকলেও সালমা বেগমের আয় বাড়তে থাকে। প্রতিদিন সীটকাপড় ও সেলাই মেশিনের কাজ করে বেশ আয় হয় তাঁর।


সালমা খাতুনের কাছে ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বামীর পক্ষে একা ইনকাম করে পাঁচজনের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যায়। নৌকার ইকাম থেকে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে এবং দোকান থেকে কিছু বাকি নিয়ে সিট কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। সেলাই মেশিনের কাজ ও সিট কাপড় বিক্রয় করে প্রতি দিন ১০০- ১৫০ টাকা ইনকাম করতে পারি।’ এভাবেই তাঁর পরিবারে আয় বৃদ্ধি পেয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে বলে জানালেন সালমা রবিউল দম্পতি।


সালমা বেগমের পারিপারিক উন্নয়নে পাশে থাকার জন্য বারসিক পরিবেশ প্রকল্পকে সালমা-রবিউল দম্পতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সালমা বেগমের এই ব্যবসাটাকে আরো বড় করে পারিবারিক আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে চান।

happy wheels 2

Comments