অনিতা রানীর অভিযোজিত কৃষি উদ্যোগ

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

মোরাগাং নদীর চরে সরকারি খাস জায়গায় বাস করেন অনিতা রানী। দুই সন্তান ও স্বামীসহ ৪ সদস্যের ছোট পরিবার তাঁর। স্বামী সুন্দরবনের নদীতে মাছ-কাঁকড়া আহরণ করে কোনরকমে সংসারের হাল ধরলেও তাতে পুরোপুরি সংকুলান হয় না। তাই পরিবারে পরিচালনার চাকা স্বাভাবিক রাখতে অন্যতম দায়িত্ব পালন করতে হয় কৃষাণী অনিতা রানীকে (৩৬)। বিয়ের পর স্বামীর অভাবের সংসারে পরপর দুটি ছেলে সন্তান জন্ম হলে সংসারের খরচের পরিমান বাড়তে থাকলেও আয় তেমন বাড়েনি।

তারা মূলত বনজীবী পরিবার। অনিতা’র স্বামী স্বপন কুমার (৪২) সুন্দরবনের নদীর উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ মাছ-কাঁকড়া আহরন করে কোন রকমে দিন চলে তার। তার নিজের কোন নৌকা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় অন্যের নৌকা ভাড়া নিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরত। মাসে যে টাকা আয় করত তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হত। এভাবেই চলতে থাকে তাদের পরিবার। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগাং গ্রামে সুন্দরী সিএসও দলে যুক্ত হয় অনতা রানী। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পণা গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষীতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে তাকে একটি নৌকা সহযোগিতা করা হয়। নৌকা পাওয়াতে এখন তিনি নিজেই তার ইচ্ছেমত স্বাধীনভাবেই মাছ-কাঁকড়া আহরণ করতে পারেন। অন্যকে ভাড়া দেওয়া লাগে না।

নদীর চরে দুটি ঘর বেঁধে তার বাস করে। বাড়তি বা নিজের কোন জায়গা না থাকায় নদীর চরে বসত ঘরের পশ্চিম পাশে নদীর চর ভরাট করে সেখানে সবজি চাষাবাদ করছেন। তিনি বর্তমানে বর্ষাকালীন সবজি চাষ হিসেবে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, তরুল, ঝিড়া, কুশি, চাল কুমড়া, ঢেড়স, শসা, পুইশাক, ডাটাশাট, কচুরমুখী চাষ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি অনিতা রানী বলেন, “আমি বারসিক থেকে সবজি চাষ ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং বারসিক থেকে বর্ষাকালীন কিছু বীজ সহযোগিতা পেয়েছিলাম। আমার বর্ষাকালীন কোন সবজী কেনা লাগে না। বরং পরিবারের চাহিদা পুরণ করে কিছু অংশ (দুই হাজার টাকা) সবজি বিক্রি করেছি।’

মাত্র ৩ শতক জায়গাতে স্বামী স্ত্রী মিলে এই সবজি চাষে সময় ব্যয় করেন। তাছাড়া তাদের বাড়িতে নারকেল, কদবেল, ডালিম ও পেয়ারা গাছ আছে। উপযুক্ত ফল/ সবজীকে বাছাই করে বীজ উৎপাদনের জন্য রেখেছেন। নিজের পরিশ্রম দিয়ে লবণাক্ত পরিবেশে কৃষিতে তিনি সফল হয়েছেন। নিয়মিত পরিচর্যা, আগাছা বাছাই, প্রয়োজনীয় সার ও ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করা সেচ প্রদানসহ সামগ্রিক দেখাশুনার কাজ করেন তিনি।

‘নিজেদের আয়ের মাধ্যমে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা চলমান রেখেছেন। ছোট ছেলে সুজয় ৩য় শ্রেণীতে ও বড় ছেলে সুব্রত ১০ শ্রেণীতে পড়া লেখা করছে। স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এ কারণে নিজেই সবজি চাষ ও বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করেছি’-বললেন অনিতা রানী।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী অনিতা রানীর মত নারীরা নানামুখী অভিযোজন চর্চা করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

happy wheels 2

Comments