![ইয়ুব রেমার অভিযোজন কৌশল](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/04/431252749_729358839353629_5256936496561383323_n-604x345.jpg)
ইয়ুব রেমার অভিযোজন কৌশল
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
ইয়ুব রেমা। বয়স ৫৪। তিনি আনচেংগ্রী গ্রামেরই একজন বাসিন্দা। তিনি চার সন্তানের জনক। দুই মেয়ে দুই ছেলে। ইয়ুব রেমা পেশায় একজন কৃষক। তিনি কৃষি কাজ করতে ভালোবাসেন। তিনি বারসিক’র বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত। বছরের অধিকাংশ সময় জমিগুলো পতিত থাকায় তিনি কুয়ো খনন করে পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার মাধ্যমে পানির সংকট মোকাবেলা করে চাষাবাদ করার চেষ্টা করেন। এভাবে তিনি প্রথমে ৫০টি গর্তে তরমুজ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম বছরে তিনি সাফল্যের সাথে কুয়োর পানি দিয়ে তরমুজ ক্ষেতে সেচ দেন। ইয়ুব রেমা বলেন, ‘এই গ্রামের জনগণ কুয়ার পানির মাধ্যমে খাবার পানির চাহিদা পূরণ করে থাকেন। গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে সকল ধরনের পানির চাহিদা পূরণ করেন কুয়ার পানি দিয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খরা মৌসুমে নলকুপগুলোতে পানি পাওয়া যায় না। তখন কুয়ার পানি আমাদের একমাত্র ভরসা।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/04/431249453_1139739084047031_6625533815558005478_n.jpg)
ইয়ুব রেমা জানান, যেহেতু কুয়ার পানির মাধ্যমে পানির সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব তাহলে চাষাবাদও করা সম্ভব হবে। এই ধারণা থেকেই তার তরমুজ চাষ করা। এভাবে তিনি তিন বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন। জমিগুলো পতিত থাকায় জমির প্রতি মায়া হয় বলে তিনি জানান। কারণ এই জমি যদি ব্যবহার করা হত তবে অভাব থাকতনা। তিনি বলেন, ‘বেশি পরিমাণে তরমুজ আবাদ করলে দুই থেকে তিনটি কুয়ো তৈরি করতে হবে। কারণ যত কুয়ো থাকবে ততোই পানির সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এই কুয়ো পদ্বতিতে তরমুজ আবাদ করে আমি সফলতা অর্জন করেছি। তরমুজ আবাদে যতটুকু খরচ করেছি তার চেয়ে লাভ হয়েছে বেশি।’
ইয়ুব রেমা জানান, তরমুজ আবাদের ফলে তাঁর জমি উর্বর হয়েছে। আমন মৌসুমে আগের তুলনায় ধান বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলন হয় ভালো। এখন তাদের গ্রামে কুয়ো পদ্ধতিতে তরমুজ আবাদ করার পরিমাণ বেড়েছে। কেউ আর নিজেদের জমি পতিত রাখতে চাইনা। তাছাড়া অনেকেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছেন এই কুয়ো পদ্বতিতে পানি সংরক্ষণ করে। ইয়ুব রেমা বলেন, আগামীতে তরমুজ এর পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ করব। কারণ এর চাহিদাও প্রচুর রয়েছে। এভাবে কুয়ো পদ্বতির বিস্তার লাভ হউক। কারণ আমরা যারা কৃষক আমাদের কৃষি কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নে কৃষকের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2024/04/431252749_729358839353629_5256936496561383323_n.jpg)
উল্লেখ্য যে, কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম হলো আনচেংগ্রী। এই গ্রামে গারো আদিবাসী ও বাঙালি জনগোষ্ঠী মিলে বসবাস করেন। গ্রামটি বালু মাটি দ্বারা আবৃত। যার কারণে খাবার ও সেচের পানির সংকট দেখা যায় সবসময়। গ্রামে একমাত্র ফসল চাষের মৌসুম হলো আমন মৌসুম। মাঝে মাঝে আউশ ধান চাষ করেন কৃষকেরা। রবি মৌসুমে একর পর একর জমি পতিত থাকে শুধু মাত্র সেচের পানির সংকট থাকার কারণে। তবে কুয়া পদ্ধতিতে বৃষ্টি সংরক্ষণ করে কৃষকরা পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন। এই কুয়াতে বৃষ্টির পানিও সংরক্ষণ করা যায়। ইয়ুব রেমা সেটাই করে যাচ্ছেন এবং পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় নিয়ে এসেছেন।