জলাবদ্ধতার কারণে হুমকির মুখে সাতক্ষীরার কৃষি
সাতক্ষীরা থেকে গাজী মাহিদা মিজান
বারসিক’র উদ্যোগে সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা গ্রামের আশুরা বেগমের বাড়িতে ‘কৃষি জমি ও মাটির স্বাস্থ্য এবং বর্তমান সমস্যা ও অবস্থা’ সর্ম্পকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ২৮ জন নারী উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় ছকিনা খাতুন (৪০) বলেন, আগে মাটির অবস্থা খুব ভালো ছিল। মাটিতে যাই লাগাতাম তাই প্রচুর পরিমাণে হত, কিন্তু এখন আর আগের মতো এত সবজি হয় না” । তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমরা আলু, মেটেেআলু, ওলকপি, লালবিট, ফুলকপি প্রভৃতি শাক-সবজি লাগাতাম। কিন্তু এখন আর এসব সবজি জমিতে হতে চায় না, গাছ একটু বড় হলে মারা যায়। আর গাছে ফল ধরলে এখন তা হলুদ হয়ে ঝরে যায়।’
মাটির শক্তি সর্ম্পকে খোদেজা বেগম (৩৫) বলেন, ‘আগে মাটিতে কোন সার, কীটনাশক ব্যবহার করা লাগত না। আরএখন বীজ লাগানো থেকে শুরু করে গাছে ফল ধরা পর্যন্ত সার বা কীটনাশক ব্যবহার না করলে গাছে পোকা লাগে, ফল ধরে না, নষ্ট হয়ে যায়।’ এ প্রসঙ্গে আশুরা বেগম (৪০) বলেন, ‘আগে জমিতে কোন সার দিতাম না, শুধু গোয়াল ঘর ঝাড়ু দিয়ে সেই ধুলোগুলো গাছের গোড়ায় দিয়ে দিতাম। আর তাতেই যা সবজি হত তা খেয়ে পারতাম না আরও বাজারে বিক্রি করতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের জমিতে আগের মতো আর তেমন শক্তি নেই তাই এসব রাসায়নিক সারের ব্যবহার এত বেড়েছে। আর এসব রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির শক্তি দিন দিন আরও কমে যাচ্ছে।’
অন্যদিকে পারুল বেগম (৩৫) বলেন, ‘আগে জমিতে কেঁচো, জোঁক, মাকড়সা, ফড়িং, সাপসহ অনেক প্রাণী দেখা যেত, কিন্তু এখন জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এগুলো আর তেমন দেখা যায় না।’ আরিফা খাতুন (৩৫) বলেন, ‘আমাদের জমির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলোজলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিতভাবে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে ঘের করার কারণে আমরা বছরে ৪-৫ মাস পানিতে ডুবে থাকি। আর আমাদের এলাকায় ঘেরের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আমাদের জমিতে ঘেরের নোনা প্রবেশ করছে । যার ফলে জমিতে শাকসবজি লাগালে তা বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
আলোচনায় উপস্থিত প্রায় সবাই একমত পোষণ করেন। তাদের জমির বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা এবং এর থেকে সৃষ্ট লবণাক্ততা। যার ফলে তাদের শাকসবজির ফলন কমে যাচ্ছে। তারা মনে করেন, তাদের এলাকার এ জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করা গেলে জমিতে সৃষ্ট লবণাক্ততার পরিমাণও কমে যাবে এবং তাদের জমিতে আগের মতো সবজি চাষ করা সম্ভব হবে।