নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে আদিবাসী দম্পতি
রাজশাজী রিনা টুডু
মুন্ডুমালা মাহালী পাড়া গ্রামের ফ্রান্সিস পাউরিয়া ও তার স্ত্রী ফুলমনি সরেন। তারা দুজনে যখন সংসার বাধেন, তখন তাদের সংসারে কোনো কিছুই ছিল না, ছিলনা কোনো ভালো ঘরবাড়ি। ছিল না গরু, ছাগলও। তাদের সংসারে ৩টি সন্তান, দু’জন ছেলে ও একজন মেয়ে। সংসারের চাকাকে সচল করার জন্য স্বামী স্ত্রী মিলে তাদের আত্মীয়ের কাছ থেকে একটি গরু আধি নিলো। কয়েকবছর পর গরু বিক্রিরে টাকা ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আরও একটি গরু কিনেন। কয়েক বছরে মধ্যে তাদের ৩টি গরু হল। দুটি গরু বিক্রি করে তারা দুটি মহিষ কিনলেন। মহিষ ও গরু লালনপালন করতে গিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন কারও জমি নিয়ে চাষবাস করবেন যাতে করে গরু ও মহিষের খাদ্য যোগান দিতে পারেন।
মানুষের জমি লীজ নিয়ে তারা চাষবাস করে নিজের ও গরু-মহিষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন। কয়েকবছর পর দুটি মহিষ বিক্রি করে সেটা টাকা সঞ্চয় করে রাখেন। এর মধ্যে তাদের ছেলে মেয়েরা বড় হলো। বড় ছেলের বিয়ে দিল। কয়েকমাস পর তাদের বড় ছেলে আলাদা হলো। ছেলে আলাদা হওয়ার পর তাদের কিছুটা কষ্ট হলেও তারা হাল ছাড়েননি! তারা তাদের ছোট্ট ছেলেকে এক দোকান বসিয়ে দেন। দোকান থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে সপ্তাহের বাজার করতে পারতেন। সংসারকে আরও ভালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য গরু বিক্রি করার টাকা ও তাদের আগে জমানো টাকা দিয়ে ৩ শতক জমি কিনেন।
সেই ৩ শতক জমিতে তারা প্রথমে শুধু গাছই রোপণ করেন যেমন আম, কাঁঠাল, কদম, ডালিম, পেয়ারা ইত্যাদি। কিন্তু শুধু গাছ লাগলেই যে তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না। তাই তারা সংসারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য জমিতে শাকসবজিও চাষ করতে শুরু করেন। প্রথমে তারা কয়েকটি সবজি চাষ করতেন পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এতে করে দেখা যায়, বাইরে থেকে তাদের সবজি কিনা লাগেনা। সবজি চাষে তারা গোবর সার ব্যবহার করেন এবং কীটনাশকের পরিবর্তে ছাই ব্যবহার করেন। এছাড়া গাছে পানি দেওয়ার জন্য তারা জমির পাশে ছোট্ট করে একটি ডোবা করেছে! এভাবে বেশ ভালোভাবেই তারা তাদের পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
তাদের এই উদ্যেগ ও সফলতা দেখে বারসিক এগিয়ে আসে। বারসিক তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দেয় যাতে করে আরও ভালোভাবে তারা পরিবেশবান্ধব উপায়ে সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারেন। তাই বারসিক তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ সহায়তা করে। এছাড়া আরও ভালোভাবে সবচি চাষ করার জন্য নানান কারিগরি পরামর্শ দেয়। ফলদ গাছের পাশাপাশি তাদের জমিতে নানান ধরনের শাকসবজি রয়েছে এখন। বর্তমানে ফ্রান্সিস পাউরিয়া ও ফুলমনির পুষ্টি বাড়িতে সব ধরনের গাছ রয়েছে। গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, পেয়ারা, কাঁঠাল, ডালিম, আমড়া, সজিনা, কলা, কদম এবং সবজির মধ্যে রয়েছে লালশাক, মুলাশাক, ধনেপাতা, টমেটো, বেগুন, মরিচ, পেঁপে, পেঁয়াজ রসুন। তাদের বাড়িতে ৩টি গরু রয়েছে। তাদের পুষ্টি বাড়ি এখন সবুজে সমৃদ্ধ।