তানোরে মজুরি বৈষম্যে নারী শ্রমিক
তানোর (রাজশাহী) থেকে অসীম কুমার সরকার
মে দিবস আসে ও যায়। তবু শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে যায় অন্তরালে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দৃশ্যমান। সারাদেশের মতো তানোর উপজেলাতেও সর্বক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অবদান বাড়লেও বাড়েনি পুরুষ শ্রমিকের সমান পারিশ্রমিক ও মর্যাদা। এখনও তারা পুরুষের সমান ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।
সরজমিনে দেখা যায়, রবিবার সকালে তানোর শিবনদী সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ করছেন একদল নারী শ্রমিক। কিন্তু এদের নির্মাণ শ্রমিক বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে নির্মাণ শ্রমিকের সহযোগী। জরিনা বেগম, রহিমা বেগম, এজবাণু, শেফালী এই শ্রমিকদেরই ক’জন। জরিনা বেগম বলেন, “আমরা মাথায় করে ইট, বালু নিয়ে মিস্ত্রির কাছে দিচ্ছি। আমাদের সব কাজই করতে হয়। কিন্তু মজুরি পাই ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ একই কাজ করে একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পান ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।”
আরেক নারী শ্রমিক শেফালী বলেন, “আমাদের টানা কাজ করতে হয়। একটু বসে থাকলে কটু কথা শুনতে হয়। আবার সঙ্গে ছোট ছেলে মেয়ে থাকলে কাজে নেয় না। কাজ শেষে পুরুষরা যখন আমাদের থেকে ১০০/১৫০ টাকা বেশি পায়, আর আমরা কম পায় তখন খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু কি করবো এইভাবেই আমাদের কাজ করতে হয় মুখ বুজে।”
শ্রমিক সর্দার আসলাম আলী জানান, নারী-পুরুষ এক সমান কাজ হয় না। তাই তাদের থেকে পুরুষ শ্রমিকদের টাকা বেশি দেয়া হয়ে থাকে। রাস্তার কাজে নিয়োজিত সহকারী ম্যানেজার মাসুম রেজা বলেন, নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বৈষ্যম্য করা ঠিক নয়। তবে এটা দীর্ঘদিন থেকে হয়ে আসছে। একটা ঠিক হতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা ‘বারসিক’ বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি মো. শহিদুল ইসলাম ও উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্রতী’ এলাকা সম্বনয়কারী অনিতা রাণী জানান, ৭০ শতাংশই গ্রামীণ নারী শ্রমিক। এদের অধিকাংশেই মজুরি বৈষম্যের শিকার। তারা ইটভাটা, কৃষিকাজ, নির্মাণ কাজ, পোশাকশিল্প, চাতালের কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক সবখানে নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন, কিন্তু তারা তাদের মজুরি পুরুষ শ্রমিকের সমান পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ করলে নারী শ্রমিককে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। এটা সমীচীন নয়। এর জন্য আমাদের সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।