ঔষধি গুণে ভরপুর টক স্বাদের আমরুল
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম
আমরুল টক স্বাদের একটি শাক। কেউবা খায় রান্না করে আবার কেউবা খায় ওষুধ হিসেবে। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ এর অভাব দূর করতে, পেট পরিষ্কার করতে, ত্বক ভালো রাখতে, মুখের রুচি বাড়াতে, সর্দি-কাঁশি সমস্যায়, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে, প্রসাবের সমস্যায় ও আমাশয় রোগ নিয়ন্ত্রণে আমরুল শাক ওষুধের মতো কাজ করে। অনেকে এটি টক হিসেবেও রান্না করে খায়। এছাড়া বাচ্চারা এটিকে খেলার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
রাস্তার আশে-পাশে, ঝোপ-ঝাঁড়ে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও বিভিন্ন গাছের গোড়ায় আমরুল শাক দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে ও হালকা ভেজা মাটিতে এই শাক বেশি পাওয়া যায়। তবে সারাবছরই আমরুল শাক কম বেশি পাওয়া যায়।
আমরুল শাকের পাতা তিনটি অংশে বিভক্ত। এর কাণ্ড ও পাতা সবুজ। পাতার প্রতিটি অংশ লাভ আকৃতির। এর কাণ্ড এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। এর পাতা এবং কাণ্ড নরম ও রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আমরুল শাকের ফুল দেখতে হলুদ রঙের। এর ফুল আকারে অনেক ছোট। ফুলের ভিতর পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। এছাড়া একটি পুংকেশর নিয়ে ফুলের মধ্যভাগ গঠিত। ফুলের ভিতর অসংখ্য পুষ্পরেণু থাকে যা এদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।
সাতক্ষীরা জেলার অনেকে আমরুল শাককে সুড়সুড়ি পাতা বলেন। অনেকে এটিকে আবার টক শাক বলেও অভিহিত করে থাকেন। আমরুল শাক অনেকটা টক স্বাদের হওয়ায় রান্না করেও খাওয়া যায়। এর টক বেশ মজাদার। এছাড়া এতে রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণাগুণ।
এ ব্যাপারে কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা রুবি খাতুন বলেন, “সর্দি-কাঁশি হলে আমরুল শাক রান্না করে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আমরুল শাকে রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণাগুণ।”
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মৃগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রেশমা খাতুন বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমরা আমরুল শাককে সুড়সুড়ি পাতা বলে জানি। এটা দিয়ে আমরা ছোটবেলায় খেলা করতাম।”
কাটিয়া সরকার পাড়ার বসিন্দা সাবরিনা সুলতানা বলেন, “আমার মা ডায়াবেটিকসের রোগী। একবার ডায়াবেটিকসের মাত্রা ২৫ পয়েন্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই ডাক্তার মা’কে টক জাতীয় কিছু খাওয়াতে বলেছিল। আমি মা’কে আমরুল শাক হালকা আলু দিয়ে রান্না করে খাওয়ায়। নিয়মিত খাওয়ানোর কারণে এখন ডায়াবেটিকস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে।”
শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “আমরুল শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ আছে। আমরুল শাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও পেট পরিষ্কার রাখতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রসাবের সমস্যা হলে আমরুল শাক রান্না করে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আমাশয়ের সমস্যায় এই শাক খুব ভালো কাজে দেয়। এটি মুখের রুচি বাড়ায়। মুখের ঘাঁ দ্রুত ভালো করে। তবে যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তরা অল্প মাত্রায় খাবে।”
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘আমরুল Oxalidaceae পরিবারের একটি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Oxalis corniculata। এর ইংরেজি নাম creeping woodsorrel বা procumbent yellow-sorrel বা sleeping beauty।
আমরুল শহরে বা গ্রামে অধিক বিস্তৃত। এর আদি নিবাস অজানা। কিন্তু এটিকে পুরোনো দুনিয়ার উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটিকে বাগানে, কৃষিক্ষেতে এবং লনে আগাছা হিসেবে ধরা হয়। আমরুলের পাতা ঔষধি শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
সব মিলিয়ে আমরুল শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণাগুণ। এই শাক খাওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়। পাশাপাশি অনেক ঔষুধের চাহিদাও মিটিয়ে থাকে আমরুল।