ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সেবা

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম

ভূমিকা
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী রাষ্ট্র কর্তৃক দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক বা অন্যকোন সহায়তা দানের ব্যবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের জাতীয় বাজেটের অধীনে একশত পঞ্চাশটিরও বেশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি রয়েছে। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ জুন, ২০১৯)। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বৃহৎ কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের এই সেবা যাদের জন্য, তাঁদের অনেকেই এই সেবা ও অধিকার সম্পর্কে ভালো না জানার কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে নগরের সুবিধাবঞ্চিত বস্তির মানুষগুলো এই সেবা সম্পর্কে না জানার কারণে সরকারের এই সেবা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যার ফলে সরকারের লক্ষীত প্রত্যাশার মানুষগুলো এই সেবা না পেয়ে পাচ্ছে অন্য কেউ।

রাজশাহীতে বস্তিবাসী প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সেবা প্রচারাভিযান
দেশের অন্যান্য নগরের মতো রাজশাহীতেও দিনে দিনে বস্তির স্যংখা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তি শুমারী ২০১৪ অনুযায়ী দেখা যায়, রাজশাহীতে ছোট বড় মিলে বস্তির সংখ্যা ১০৪টি। মোট খানার সংখ্যা ১০২০২, যার জনসংখ্যা ৩৯০৭৭ জন। রাজশাহী শহরে প্রায় ৮০.৫৫% খানা সরকারি জমিতে ঝুপড়ি বা ছোট টিনের ঘরে বসবাস করে। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, জ্বালানি, ঝঁকিপূর্ণ পেশা, দুর্যোগকালীন সময়ে মানবেতর জীবনের সমস্যাসহ সরকারি পর্যায়ের সেবা পরিসেবাগুলো সম্পর্কে তাঁদের ধারণা একেবারেই কম। বর্তমান জনবান্ধব সরকার প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে বিশাল অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি থেকে যেগুলো বস্তিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য সেই সেবা এবং অধিকারগুলো যেন সহজেই বস্তিবাসীগণ জানতে পারে এবং পায়, সেই সকল প্রধান প্রধান সেবাগুলোর নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এই আয়োজনের কাজ শুরু করেছে। সহযাত্রী হিসেবে স্থানীয় তরুণ সংগঠন এবং জনসংগঠনগুলো ভূমিকা পালন করছেন।

এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে “সেবা জানবো-সেবা নিব, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করব” এই শ্লোগানে গত৫ জানুয়ারি দিনব্যাপী রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া হরিজন কমিউনিটির মাঠে শহর প্রান্তিক বস্তিবাসীদের জন্য সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুযোগ বিষয়ক‘ সেবা প্রচারাভিযান’ এর শুভ উদ্বোধন ও দিনব্যাপী সেবা প্রচারাভিযানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ মান্নান । সকালে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে সেবা প্রচারাভিযারটি শুরু করা হয়। সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত বস্তীবাসী শিক্ষার্থী, নবীন প্রবীণ, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, নারী পুরুষ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ লোকজ ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করেন। সেবা প্রচারাভিযানে দিনব্যাপী বস্তিবাসীগণ সরকারী নিরাপত্তা বেষ্টনীর সেবাসহ অন্যান্য সেবা সম্পর্কে স্টলে এসে জানেন। একই সাথে বস্তিবাসীদের মধ্যে থেকে সেবাপ্রাপ্য দের আইডি কার্ড সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো সমাজ সেবাসহ সংশ্লিষ্ট সেবা দপ্তরে পৌছে দেয়া হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজশাহীর তরুণ ডাক্তারদের সংগঠন ডেন্টিস্ট ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূর্যকিরণ বাংলাদেশ ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা এবং বলাড গ্রæপিং ক্যাম্প এর আয়োজন করেন। সেবা ক্যাম্পে শতাধিক বস্তিবাসী সেবা গ্রহণ করেন। বিকালে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বস্তিবাসীদের মাঝে অগ্নি, দূর্ঘটনা, ভূমিকম্প সহ সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শিখন এবং মহড়া প্রদর্শন করেন। বিকালের সেবা বিষয়ক আলোচনায় বস্তিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিষয়ক আলোচনা এবং করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়।

সেবা প্রচারাভিযানের শেষ পর্বে বস্তির শিশুদের মেধা বিকাশে নাচ, গান এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বস্তিবাসীর সেবাগুলো কোথায় কিভাবে পাওয়া এ বিষয়ে সচেতনতামুলক গম্ভীরার আয়োজন করেন বারনই লোক সাহিত্য পরিষদ। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন হরিজন কমিউনিটির শ্রী কিরণ চন্দ্র সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী, নবজাগরণ ফাইন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিফাত হোসেন, ডেন্টিস্ট ক্লাবের সভাপতি ডাঃ আবেদ হোসেন, সূর্যকিরণ বাংলাদেশের সভাপতি শাইখ তাছনিম জামাল। সেবা প্রচারাভিযানে বুধপাড়া বস্তি এলাকার প্রায় পাঁচ শতাািধক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

উপসংহার
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, সময় উপযোগী ও সঠিক নির্দেশনায় সরকারি বেসরকারি নানাবিধ কার্যক্রমে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। শহর ও গ্রাম পর্যায়ে বর্তমান সরকার সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য নানাবিধ সেবা পরিসেবা সৃষ্টি করেছেন। একইসাথে সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা এবং পরিসেবাগুলো কিভাবে প্রান্তিক মানুষগুলো নিতে পারবে সে বিষয়ে প্রয়োজন সকল প্রতিষ্ঠানের আন্তরিক সহযোগিতা। যাতে আগামীতে শহরের প্রান্তিক মানুষগুলোর ঘরে ঘরে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সেবাগুলো পৌঁছতে পারে।

happy wheels 2