কৃষকের বন্ধু ‘ফিঙে রাজা’ পাখি

সাতক্ষীরা থেকে আসাদুল ইসলাম
ফিঙে পাখি কৃষকের পরম বন্ধু। ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখে এই পাখিটি। এখনো ধান বা অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে এই পাখির আনাগোনা দেখা যায়। তীক্ষ্ন দৃষ্টি দিয়ে ফসলের মধ্য থেকে বিশেষ করে ধানের মধ্য থেকে পোকা ধরে এনে এরা খায়। ফলে প্রত্যক্ষভাবে ফসলের উপকার করে পাখির রাজা ফিঙে পাখি।

গ্রাম বাংলায় এই পাখিটিকে সবাই ‘ফিঙে রাজা’ নামে চেনে। বাংলায় এর নাম ‘ফিঙে’। ইংরেজিতে ‘ব্ল্যাক ড্রোঙ্গো’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘Dicrurus macrocercus’। একটি ফিঙে পাখি লম্বা হয় লেজসহ প্রায় ২৮-৩১ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত কালো পালকে আবৃত। কালোর ওপরে নীলাভ আভা বের হওয়াতে পালিশ করা চকচকে দেখায়। এদের ঠোঁট ধাতব কালো। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা রেখা। যা দূর থেকে আঁশটে দেখায়। পা কালচে। এই ফিঙে পাখি স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।
ফিঙে সাধারণত ক্ষেতের আশেপাশে বাসা বাঁধে। এরা ক্ষেতের ধারে থাকা গাছের ডালে বসে ক্ষেতের দিকে তীক্ষ্ন নজর রেখে পোকা শিকার করে খায়। বিশেষ করে ধানে ও সরিষা জাতীয় ফসলের ক্ষেতের আশাপাশে এদের বেশি দেখা যায় এবং ফসলের ক্ষতিকর পোকা খায়।

Satkhira pic1
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ধান বা অন্যান্য ফসলে ১৭৫টি প্রজাতির অনিষ্টকারী পোকা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০-৩৩টি প্রজাতিকে প্রধান ক্ষতিকর পোকা হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফিঙে পাখি বিভিন্ন ধরনের পোকা খেয়ে দ্রুত এদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।

ফিঙের প্রধান খাবার ক্ষেতের কীটপতঙ্গ। একটি ফিঙে মাজরা পোকাসহ প্রতিদিন অনেক ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে থাকে। একটি স্ত্রী মাজরা ২০০ অধিক মাজরার মথ জন্ম দেয়। যদি ফিঙে অন্তত একটি স্ত্রী মাজরা পোকা খায় তবে ২০০ অধিক পোকা দমন হয়। এছাড়াও ফিঙে ঘাসফড়িং, হলুদ মাজরা পোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং ও পামরি পোকাসহ ফসলের ক্ষতি করে এমন বহু পোকা খেয়ে ফসলের অথ্যাৎ কৃষকের প্রত্যক্ষ উপকার করে।

Satkhira Pic
সাতক্ষীরা সদরের রাজার বাগান গ্রামের কৃষক জয়নাল সরদার জানান, তারা ফসলের পোকা দমনে ক্ষেতের মধ্যে গাছের ডাল পুঁতে রাখেন, যাতে ফিঙেসহ অন্য পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফিঙে পাখি সব সময় ক্ষেতের মধ্যে বসে থাকে পোকা ধরার জন্য। পোকা ধরাতে ফিঙে খুবই অভিজ্ঞ। এদের নিশানা নষ্ট হয় না। এই ফিঙে পাখি ফসলের খুব উপকার করে। তিনি আরো জানান, এখন আর আগের মতো ফিঙে পাখি দেখা যায় না। এখন এদের কম দেখা যায়। কারণ ক্ষেতে বিষ দেওয়ায় এরা বসতে চাই না। আবার অনেকে ফাঁদ পেতে এদের ধরা। ফলে দিন দিন এদের সংখ্যা কমছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ফিঙে পাখি কৃষি ও কৃষকের পরম বন্ধু। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে ফিঙে পাখির অবদান অতুলনীয়। পার্চিং পদ্ধতিতে ধানের জমিতে গাছের ডাল পুঁতে রাখলে, সেখানে ফিঙে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। ফলে, ফসলের প্রত্যক্ষ উপকার করে এই ফিঙে। এতে কৃষকের অনেক লাভ হয়।” তিনি আরো বলেন, “ক্ষেতে যদি ডাল পুঁতে রাখা হয় তাহলে ফিঙেসহ অন্যান্য পাখি বসে ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে সহায়তা করে। এর ফলে ফসলে বিষ প্রয়োগ করা লাগে না। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে গাছে ডাল পুঁতে রাখার পরামর্শ দেই যেন ফিঙে সহ অন্যান্য পাখি বসে পোকা খেতে পারে।”

happy wheels 2

Comments