কাঁচা রাস্তা হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার খুটিকাটা গ্রামবাসী

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ২নং কাশিমাড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের খুটিকাঠা গ্রামের রাস্তাটি কাঁচা ও সংস্কার না হওয়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এই রাস্তা দিয়ে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ ব্যবহার করেন। এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের উৎপাদিত পণ্য, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের চলাচল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না হওয়া এবং কাঁচা থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগোষ্ঠী রাস্তাটি পাকা এবং সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে চলেছে।


সম্প্রতি বারসিক’র ধারবাহিক কাজের আওতায় উপকূলীয় বিভিন্ন গ্রামে মাঠ পর্যবেক্ষণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ কালে খুটিকাটা গ্রামের জনগোষ্টীর সাথে আলোচনা হয়। আলোচনায় খুটিকাটা গ্রামবাসীরা জানান, ‘কাশিমাড়ি ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রামটি একটি কৃষি প্রধান গ্রাম। কৃষির সমস্ত নির্দশন রয়েছে গ্রামটিতে। এখানে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হয়। প্রতিটি বাড়িতে প্রাণবৈচিত্র্য ভরপুর। এখানে প্রতিটি বাড়িতে আছে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছ, পুকুর ও খালে আছে নানান ধরনের স্থানীয় প্রজাতির মাছ। এছাড়াও প্রায় বাড়িতে জৈব সারের ব্যবহার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু গ্রামটির রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। যার জন্য উন্নয়ন কাজ করেও পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। শুধু দরকার রাস্তাটি পাকা করা। তাহলেই সব সমস্যা দুর হবে।’


অংশগ্রহণকারীরা আরও জানান, ‘আমাদের গ্রামে কৃষি কাজ দেখে সরকারি ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখানে এসে কাজ করছে আমাদের কৃষিকে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করছে। বিভিন্ন ধরনের উপকরণও সহায়তা করছে। কিন্তু আমাদের মূল যেটি দরকার সেটি নিয়ে কেউ ভাবছে না। গ্রামটিতে ভালো ফসল উৎপাদন হলেও তার জন্য সঠিক বাজার ব্যবস্থা নেই। কারণ এই রাস্তা দিয়ে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য পাশ^বর্তী মৌতলা ও নঁওয়াবেকী বাজারে নিয়ে যেতে হয়। আর সেখানেই আমাদের সমস্যা। শুকনার সময় কোন রকমে সাইকেল ও ভ্যানে করে প্রধান রাস্তায় নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু বর্ষার সময়ে মাথায় করে নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার কাচা কাদা রাস্তা দিয়ে পিচের রাস্তায় উঠতে হয়।’


খুটিকাটা গ্রামের তরুণ চাষী নীলকমল সরদার বলেন, ‘আমি খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে বাবা মায়ের সাথে কৃষি কাজে যুক্ত হয়। এই গ্রামের এখন আমি একজন সফল চাষী। বসতভিটাসহ কৃষি জমিতে মৌসুমভিত্তিক বারোমাস নানান ধরনের ফষল চাষাবাদ করি। আর আমার এই চাষাবাদ দেখে গ্রামের অন্য মানুষেরা বিশেষ করে যুবরা যুক্ত হচ্ছে কৃষি সাথে। অন্য মৌসুমের পাশাপাশি আমন মৌসুমের ধান উঠে যাওয়ার সাথে সাথে বিল জমিতে ঢেড়স, পুইশাক, বরবটি, কচু, ভুট্টা, লালশাক, পালনশাক, কুচুরমুখি, পেয়াজ, রসুন, আদা ও তরমুজ সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশ ও জাতির জন্য ফসল উৎপাদনে নিরলস ভূমিকা রাখলেও আমাদের উন্নয়নের কথা কেউ ভাবিনি। আজ যদি আমাদের এই রাস্তাটি পাকা ও সংস্কার হতো তাহলে আমরা কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারতাম। আমাদারে সকলের দাবি যাতে খুটিকাটা গ্রামের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’


কৃষাণী সবিতা সরদার বলেন, ‘শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা তেমনি পানির ও অনেক সমস্যা। অনেক দুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় আমাদের। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি। আর অন্য সময় খাল পার হয়ে পাশ^বর্তী গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। শুধু মাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আমাদের পণ্যের বাজার, পানি, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানান সমস্যায় জর্জারিত হতে হচ্ছে।’

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগ প্রবণ ও লবণাক্ততা এলাকা হিসাবে পরিচিত। এ দুর্যোগ ও লবণাক্ততার মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার অনেক গ্রামে কৃষিকে আগলে রেখে কৃষি কাজকে সমৃদ্ধ করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। তাদের কাজের আগ্রহ উদ্দীপন ও সমস্যা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

happy wheels 2

Comments