ছাগল পালনে মায়া রানীর ভাগ্য বদলাতে শুরু করছে

সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ঝাঁপা গ্রামে একটি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার মায়া রানী (৪২)। এক ছেলে ও বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে অভাবের সংসারে দিন কাটে তাঁর। মায়া রানী বাড়ির গৃহস্থালির কাজ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। নদীতে মাছ ধরে কোনরকমে সংসার চালান তিনি। অভাবের কারণে ছেলেটাকে বেশি দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পারেননি। তাঁর ছেলে আয়মূলক কোন কাজে নিয়োজিত না। তবে বিয়ে করে সংসারে নতুন আরেকজন সদস্য নিয়ে এসেছে। ফলে এমনিতেই অভাবের সংসার তার উপর এতগুলো মানুষের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় মায়া রানীকে। বসতভিটায় জায়গার পরিমাণ কম এবং সামর্থ্য না থাকায় নিজেদের বসবাস করার ঘরটাও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েকবার ভেঙে গেছে। ঘরের চালের টিন উড়ে চলে গেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে আবার কোনরকমে ঘরটা মেরামত করে সেখানে বসবাস করেন মায়া রানী।

এরকম পরিস্থিতিতে মায়া রানী ও তার পরিবার যখন পুরোপুরি দিশেহারা ঠিক তখনই বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের গোলাপ দলের সদস্য হিসাবে যুক্ত হন তিনি। তিনি প্রতি সপ্তাহে গ্রুপ মিটিং এ হাজির হন এবং একটা পর্যায়ে জলবায়ু সহনশীল কৃষিচর্চা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণি সম্পাদের লালনপালন, পরিচর্যা ও বসতভিটায় যে সামান্য জায়গা রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সবজি চাষ করতে হয় সে বিষয়ে জানতে পারেন। মায়া রানী ও তাঁর পরিবারের সাথে পরামর্শ কওে আয়বর্ধনমূলক কাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য তাকে প্রকল্প থেকে ছাগল পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নেটজ্ বাংলাদেশের সহায়তায় বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে ১১, ৫০০ টাকার মূল্যের ৪টি ছাগল দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে হাঁস ও মুরগিও দেয়া হয়। মায়া রানী ছাগলগুলো তার নিজের সন্তানের মত যতœ করে লালন পালন করেন। সাপ্তাহিক সভায় এসে তিনি জানতে পারেন যে নিয়মমত ভ্যাকসিন দিলে ও কৃমির ঔষধ খাওয়ালে ছাগল অনেক ভালো থাকে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমে যায়। ফলে তিনি বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের প্যারাভেট কর্মী প্রভাতী রানীর নিকট থেকে ছাগলগুলোর ভ্যাকসিন নেন। বর্তমানে সঠিক পরিচর্যার ফলে তাঁর ৪টি ছাগল ৭টি বাচ্চা দিয়েছে এবং মোট ছাগলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টিতে।

মায় রানী এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছে ১১টি ছাগল থেকে ৬টি বিক্রি করে তার বসবাসের ঘরটি নতুন করে মেরামত করবেন এবং ছেলের জন্য একটা ভ্যান কিনে দেবেন যাতে করে তার ছেলেও বেকারত্ব থেকে বেরিয়ে এসে আয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে। তাঁর ছেলে যাতে পরিবার চালানোয় ভূমিকা রাখতে পারে। ছাগল পালনে জীবন পাল্টে গেছে মায়া রানীর। তিনি এখন অনেক খুশি।

happy wheels 2

Comments