আমরা জলবায়ুর সুবিচার চাই

রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেন (৩৯)। বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই বোনদের জমি ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে নিজের ভাগের ৫বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। যখন জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে একটু বৃষ্টি হয়েছিলো ঠিক তখন। একটু বৃষ্টিতে ধান লাগানোর জমিগুলো চাষ দিয়ে রেখে, বীজতলাও তৈরি করে নিয়েছিলেন। আশা ছিলো ১৫-২০দিনের চারা রোপণ করবেন। এদিকে আস্তে আস্তে বীজতলার বীজ বড় হতে থাকলেও বৃষ্টির আর দেখা নেই। কোন উপায় না পেয়ে আষাঢ় মাসের ১৮ তারিখের দিকে গভীর নলকুপে পানির সিরিয়ালের পিছে ঘুরে ঘুরে কোন রকম জমি তৈরি করে ধান রোপণ করেন। এরপর থেকে জমিতে আর পানি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। পানি না পেয়ে আমনের জমি আজ ফেঁটে চৌচিড় অবস্থা। এরকম অবস্থা মোহর গ্রামের আশেপাশের সকল গ্রামেই সকল কৃষকেরই। যারা কোন রকম গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচ নিয়ে ধান রোপণ করেছিলেন তারা ১০-১৫ দিন থেকে জমিতে আর পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি। সারাদিন ডিপ চালু থাকলেও চাহিদার তুলনায় পানি সেচ প্রদান করতে পারছে না। পাতাল পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানিও উঠে কম।


মোঃ আলমগীর হোসেন নিজ গ্রামের যুবকদের নিয়ে “মোহর স্বপ্ন আশার আলো” নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। ধানের জমিতে পানি নেই পানি সমস্যা সমাধানের পথ তাঁর জানা নেই। তাই তিনি গ্রামের কিছু তরুণ, কৃষক ও কৃষাণী নিয়ে আমনের শুকনো জমিতে অভিনব পদ্ধতিতে সবার নিকট একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কৃষকরা দায়ি নয়। কৃষকদের হাতে একটি করে কাগজ দিয়ে তাতে লিখে দিয়েছেন, “আমরা কৃষক আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ি নই বা আমি জলবায়ু সুবিচার চাই।’ গ্রামের অনেক কৃষক নিজেদের অপারগতার কথা তুলে ধরার জন্য আজ একত্রিত হয়ে এ দাবি জানিয়েছেন।


এই গভার নলকুপের আততায় পরে মোসাঃ জমেলা বেগমের (৪৫) একবিঘা জমি তিনি ধার দেনা করে পানি সেচ নিয়ে জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। আজ পানির অভাবে ধান শুকিয়ে গেছে, আমার ফসল পুরে যাচ্ছে। তিনি চিন্তা করছেন ধান না হলে পরিবারের খাবার কিভাবে জুটাবেন। তাই তিনিও ছুটে এসেছেন একটি কাগজ হাতে নিয়ে তাঁতে লিখা “আমরা জলবায়ুর সুবিচার চাই।


বৃষ্টির সময় বৃষ্টি হবে তাঁতে সময়মতো কৃষকরা ফসল রোপণ করবেন। এরপর পরিপক্ক হলে ফসল ঘরে তুলবেন। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে কৃষকদের চিন্তা করার অবকাশ নেই। কিন্ত এবারের চলতি আমন মৌসুমে এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই আষাঢ় মাসের পুরোটা এবং শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে গেলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না কৃষকদের কাছে। তাই উপায় না পেয়ে সবাই ছুটছে গভীর নলকুপের দিকে। আর এমন অবস্থায় গভীর নলকুপের চালকও নিরুপায়। মোহর গ্রামের গভীর নলকুপের চালক মোঃ মকলেচুর রহমান (৫২) বলছেন, ‘আমন মৌসুমে আমাদের ডিপ চালাতেই হয় না, কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো মৌসুম শুর থেকেই নিয়মিত ডিপ দিয়ে পানি তুলতে হচ্ছে। বিগত কয়েকদিন সারাদিন সারারাত পানি তুলেও সব জমিতে পানি দিতে পারছি না। পানিও আগের তুলনায় কম উঠছে।’

happy wheels 2

Comments