প্রাকৃতিক দূর্যোগে পরিরের জন্য নারীর ভাবনা ও উদ্যোগ
কলমাকান্দা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা, খায়রুল ইসলাম অপু ও গুঞ্জন রেমা
প্রাকৃতিক দূর্যোগে দূর্ভোগের মাত্রা একেকটি এলাকায় একেক রকম। তাই মানুষের অভিযোজন দক্ষতাও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। গ্রামীণ নারীদের প্রাকৃতিক দূর্যোগে টিকে থাকার জন্য রয়েছে বহুমাত্রিক জ্ঞান ও দক্ষতা। তাদের এই জ্ঞানগুলো লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায় সব সময়। তাই গ্রামীণ নারী দিবসে চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের নারীরা উদ্যোগ নিয়েছেন নিজেদের জ্ঞানগুলো পরস্পরের সাথে সহভাগিতা করার।
চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষাণী শিলা চিসিক বলেন, “আকাশে কালো মেঘ থাকাকালীন উইপোকা বেশি পরিমাণে উড়লে আমি ধারণা করি কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি নামবে ঝড়ও হতে পারে। তখন আমি রান্নার জন্য লাকড়ি (জ্বালানি) শুকিয়ে রাখি। বর্ষাকালের জন্যও আমি বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসেই লাকড়ি মজুদ করতে শুরু করি। এতে করে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় রান্নার জন্য লাকড়ির সমস্যা হয়না। এছাড়াও আমি টিউবওয়েল থেকে সংগ্রহ করা আয়রন পানি বালি ও পাথর দিয়ে ছেকে আয়রনমুক্ত করে আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করি।”
হাতিবেড় গ্রামের পৃতিনা মানখিন বলেন, “আমরা সারাবছর পাহাড়ি ঝরণা থেকে পানি খাই, পরিবারের সবার জন্য আমি ঝরণা থেকে পানি তুলি। কিন্তু বর্ষাকালে যখন বন্যা হয় তখন ঝরণার পানি আনতে সমস্যা হয়। তাই যখন না থেমে বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হতে থাকে তখন ঝরণার পানি তুলে রাখি। এইভাবে আমি আমার পরিবারের মানুষের খাবার পানির সমস্যার সমাধান করি।” চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের সমলা বেগম বলেন, “আমার বাড়িতে দু’টি গরু আছে। পরিবারে আমি ও আমার স্বামী দুইজনই। আমার স্বামী কাজের লাইগ্যা সারাদিন বাইরে থাকে। তাই রৌদ ঝড় বৃষ্টির সময় আমিই গরুর দেখাশুনা করি। গরুর লাইগ্যা ঘাস কাটি। গোওয়ালে ঘাস মজুদ কইরা রাখি। যেন ঝড় বাদলার দিনে গরুর ঘাসের সমস্যা না হয়।”
পাতলাবণ গ্রামের এপ্রিনা কুবি বলেন, “শুকনো মৌসুমে আমাদের খাবার পানির অনেক সমস্যা হয়। আমি বালি খুড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে পরিবারের সকলের খাবার পানি যোগার করি।” চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের প্রজাপতি হাজং বলেন, “ছোট ছোট শিশুরা ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত, ঢল হলেও বাড়ির বাইরে থাকে, এতে যেকোন সময় যেকোন ধরনের বিপদ হতে পারে। আমরা নারীরাই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখি। প্রবীণদের সেবা যত্ন করি। কিন্তু এই কাজের জন্য আমরা মূল্যায়ন পাইনা। তাই আমরা নারীদের এইসব কাজের মূল্যায়ন দাবি করি।”
১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে দূর্যোগ মোকাবেলা করেই গ্রাম বাচাঁয় নারী এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রংছাতি ইউনিয়নের চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়া গ্রামীণ নারী দিবসে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. হাদিউল, মো. হাসমত, গ্রেগরী মারাক ও বারসিকের অর্পণা ঘাগ্রা, গুঞ্জন রেমা।