নারী-পুরুষের স্বচ্ছলতার সঙ্গে পাল্টে গেছে গ্রামীণচিত্র
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) ॥
মানিকগঞ্জের ঘিওরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামের চিত্র। সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলজুড়ে চলছে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ। এতে অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারেব দরিদ্রতা নিরসন হচ্ছে। সরকারিভাবে ১ম পর্যায়ে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৭ শ’ ৮৯ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা একত্রে সমানভাবে মজুরি পাওয়ায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এছাড়াও সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত টিআর কর্মসূচি দিয়ে উন্নয়ন করা হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাদ্রাসা, স্কুল/কলেজ, এতিমখানা। এ সমস্ত কর্মসূচিতে মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জনমানুষের জীবনমানে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
এসব শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপথ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটের চেহারা এখন অনেকটায় পাল্টে গেছে। বর্তমান সরকার এ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছেন এক সময়ের অবহেলিত গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা। কর্মহীন মৌসুমে সরকারে এ প্রকল্পটি অসহায় দুঃস্থ পরিবারের শ্রমিকদের জন্য বেচেঁ থাকার আশার আলো জুগিয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার বড়টিয়া, পয়লা, সিংজুরি, নালী, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া ৭টি ইউনিয়নে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে পূবে চলাচল করা যেত না। বর্তমানে কর্মসংস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তাঘাট মেরামত করায় রাস্তা দিয়ে এখন রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচল করছে।
ঘিওর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, “আমার ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পের ১শ’ ১৮ জন শ্রমিক একত্রিতভাবে নারী ও পুরুষ কাজ করছেন। সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ২শ’ টাকা বেতনে সবাই কাজ করছেন। নারী-পুরুষ বেতনের কোন বৈষম্য এখানে নেই।” সমানভাবে বেতন পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকরা। এদিকে শ্রমিকরা জানান, বছরের শুরুতে তারা বেকার ছিলেন। কাজ না পেয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে সরকারের মহতী এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’ মুঠো খেয়ে জীবনধারণ করছেন। সরকারের গৃহীত কর্মসংস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ঘিওরে ১ম পর্যায়ের মাধ্যমে ৭টি ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের দৃশ্যপট এখন অনেকটায় পাল্টে গেছে।
বানিয়াজুরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চতু বলেন, “আমার ইউনিয়নে ১শ’ ২২ জন নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করছে। বর্তমানে শোলধারা গ্রামের রাস্তার কাজ করছে তারা।” উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ- সহকারী প্রকোশলী মো. ইসতিয়াক আহম্মেদ জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সরকারের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ের ২৭ টি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সঠিকভাবে শুরু করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা খন্দকার বলেন, “আমি প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেছি। ৭টি ইউনিয়নের মোট ৭শ’ ৮৯ জন নারী এবং পুরুষ মিলে মিশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করছেন। এর মধ্যে ঘিওরে ১শ’ ১৮ জন, পয়লা ইউনিয়নে ১শ’ ১৯ জন, সিংজুরি ১শ’ ৬ জন, বড়টিয়াতে ১শ’ ২৩ জন, বানিয়াজুরিতে ১শ’ ২২ জন ও নালীতে ৯২ জন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করছে।” তিনি বলেন, “প্রত্যেক শ্রমিকদের নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। প্রত্যেকের টাকা ব্যাংকে জমা হবার পরে যথাসময়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন।”
সরকারের এই প্রকল্পটি এলাকার দরিদ্র বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এলাকার বেকার ও দুঃস্থ পরিবারের লোকজন অল্প সময়ের জন্য হলেও খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। সেই সাথে গ্রামীণ জনপদের লোকজনও এর সুফল বইতে শুরু করেছে।